পাবনায় ‘সিরিজ রেপ’ তদন্তে সত্যতা মিলেছে

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, পাবনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, ছবি:বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, ছবি:বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পাবনায় দু’দফায় পালাক্রমে ধর্ষণ, থানায় অভিযোগ না নেওয়া, জোরপূর্বক থানার ভেতরে বিয়েসহ বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশিত পাবনা জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ তার বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাবনার এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে ‘সিরিজ রেপ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘গণমাধ্যমের প্রত্যেকটি অভিযোগ তদন্ত কমিটি আমলে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘রোববার রাতেই পুরো ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ সেখান থেকেই নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: গণধর্ষণের পর থানায় বিয়ে, রোববার প্রতিবেদন দেবে তদন্ত কমিটি

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, ‘গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে না আসলে হয়তো এ ঘটনা আলোর মুখ দেখতো না। পাশাপাশি পাবনার এই চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও থানার মধ্যে ধর্ষিতার সঙ্গে এক ধর্ষকের বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আসার সাথে সাথেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দৃষ্টিগোচরে আসে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটির প্রধান করা হয় পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে। বাকিরা হলেন পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবনে মিজান ও পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু জাফর।

প্রসঙ্গত, গত আগস্টের ২৯ তারিখ রাতে পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের তিন সন্তানের এক জননী ওই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদের সাথে প্রেমের সম্পর্কে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। এ সময় রাসেলসহ তার অপর দুই বন্ধু তাকে এক বন্ধুর বাড়িতে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

আরও পড়ুন: গৃহবধূকে গণধর্ষণ ও থানায় বিয়ে: আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন

ঘটনার পরদিন ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ওরফে ঘন্টুর শরণাপন্ন হন এই ঘটনার বিচার চাইতে। ঘন্টু ও তার কয়েক বন্ধু মিলে তারই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অফিসে ওই নারীকে আটকে রেখে তিনদিন ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সেখান থেকে ওই নারী পালিয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে সব খুলে বলেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর ওই নারীকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন রাতে ওই নারী পাবনা সদর থানাতে অভিযোগ দিতে আসলে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে উল্টো ধর্ষক রাসেলকে ডেকে তার সঙ্গে বিয়ে দেন।

বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে মামলার ৫ আসামিকে পুলিশ পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) মো. ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এবং কোর্ট ইন্সপেক্টর ও ডিআই-১ কে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রাথমিক অবস্থায় পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

আরও পড়ুন: পাবনায় গৃহবধূ গণধর্ষণ: ওসি প্রত্যাহার, এসআই সাময়িক বরখাস্ত

এদিকে, ধর্ষণের অভিযোগে পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাবনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।