রাজস্ব ঘাটতির শীর্ষে বেনাপোল কাস্টমস
সুষ্ঠু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে আমদানি কমেছে। এতে রাজস্ব ঘাটতিতে শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করছে বেনাপোল কাস্টমস।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেনাপোল সম্ভবনাময়ী বন্দর হলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। এটা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। বৈধ সুবিধা না পেলে ব্যবসায়ীরাও আমদানি করতে চাইবেন না। ফলে রাজস্ব তো কমবেই। গুরুত্ব বুঝে বন্দরের উন্নয়ন করলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বন্দরের সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। দেশে এখন অনেক পণ্য তৈরি হওয়ায় আমদানি কমেছে। ফলে রাজস্বও কমছে। তবে এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তারা।
বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৩৫টি ট্রাকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা কম।
এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রাজস্ব কম আসে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭৬০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয় ৩ হাজার ৮০৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফলে রাজস্ব আয় বেশি হয় ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি ছিল ২০৩ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয় ২ হাজার ৪৭২কোটি ৬৮ লাখ। ফলে ঘাটতি ছিল ৯৫ কোটি টাকা।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্বা ঘাটতি ছিল ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯৪ কোটি টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৫ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানি কমায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সুজন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন হয়েছে, তবে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে ঢোকার পর খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়। সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। সুবিধা বঞ্চিত হয়ে অনেক ব্যবসায়ী এ পথে আমদানি কমিয়েছেন। ফলে এনিতেই রাজস্ব আদায় কমছে।
ভারত বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন বন্দর উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নের দিক থেকে বেনাপোল বন্দর অবহেলিত। পায়রা বন্দরে এখনও আমদানি শুরু হয়নি। অথচ সেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ব্যয় শুরু হয়েছে। ভারতের পেট্রাপোল বন্দর স্বারাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। আর বেনাপোল বন্দর রয়েছে নৌ-পরিবহনের অধীনে। বন্দরের উন্নয়ন চাইলে অবশ্যয় স্বরাষ্ট্র অথবা অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকতে হবে।’
সাধারণ আমদানিকারক ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘দেশের স্থলপথে যে আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যার কারণে অনেক ব্যবসায়ী এবন্দর ছেড়ে চলে গেছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে তারা আবার এ বন্দরে ফিরে আসবেন। এতে রাজস্ব আদায় বাড়বে।’
বেনাপোল বন্দর পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বেনাপোল বন্দরে ওয়্যার হাউস ও রাস্তাঘাটের কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বণিজ্যের স্বার্থে প্রয়োজনীয় আরও কিছু অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘রাজস্ব বেশি আয় হতো এমন পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। এতে রাজস্ব আয় কমেছে। আর আমদানি-রফতানি বাড়ার বিষয়টি কাস্টমসের ওপর নির্ভর করে না।’