ভাতা নিয়ে হয়রানি বন্ধে মোবাইল সেবা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকিয়া আক্তার। ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৩৯ বছর। কিন্তু তিনি নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন। তার স্বামী মনির হোসেনের বয়স ৫৭ বছর। তিনিও বয়স্ক ভাতা নিচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে সরকারের বয়োজ্যৈষ্ঠ দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা নিচ্ছেন তারা। অথচ তাদের বয়স্ক ভাতা পাওয়ার বয়সই হয়নি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের ২০১৩ সালের নতুন তথ্য অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পেতে পুরুষদের ৬৫ ও মহিলাদের ৬২ বছর হতে হয়।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য জাকিয়া আক্তার জানান, ৩০-৪০ বছর হলেই বয়স্ক ভাতা পাওয়া যায়। শুধু তিনি নন আরও অনেক ইউপি সদস্য বয়স্ক ভাতা পান।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের তথ্য সেবার দায়িত্বে থাকা শুকুর আলম জানান, বয়স্ক ভাতার ডাটাবেজের কাজ শেষ হয়ে গেছে। যাদের বয়সের গড়মিল ছিল, তাদের ভোটার আইডি কার্ড পুনরায় সংগ্রহ করে ডাটাবেজে আপলোড করা হয়েছে। এখন সমাজসেবা অধিদপ্তর যাচাই-বাছাই করবে।
১১নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফিল্ড কর্মকর্তা রওশন আরা জানান, প্রত্যেকের ভোটার আইডি কার্ড জমা নিয়ে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। যাদের বয়স মিল থাকবে না, তাদের ভাতা বাতিল হয়ে যাবে।
জানা গেছে, সরকার ভাতা ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করতে সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলাকে ইউনিয়ন তথ্য সেবার মাধ্যমে ডিজিটালাইজড ভাতা প্রদানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমে বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও বিধবা ভাতা রয়েছে। কয়েকটি জেলার মধ্যে চাঁদপুর জেলাও এই কার্যক্রমের মধ্যে পড়েছে। ইতোমধ্যে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক সেবা চলছে। এগুলো হলো—উত্তর রূপসা ও দক্ষিণ রূপসা ইউনিয়ন এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন।
এদিকে চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় ইতোমধ্যে ইউনিয়ন তথ্য সেবার উদ্যোক্তার মাধ্যমে সকল ভাতাভোগীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই জেলায় ভাতাভোগীরা মোবাইলে তাদের ভাতা কার্যক্রমের সুবিধা পাবেন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলায় বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৭৫ হাজার ৮৯৫ জন এবং চলতি অর্থবছরে ভাতাভোগী বেড়েছে ৯ হাজার ৫৮৭ জন।
উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন কচুয়া উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভা ১০ হাজার ৬৩৩ জন, নতুন ১ হাজার ২২৪ জন। হাজীগঞ্জ উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভায় ৯ হাজার ৪১১ জন, নতুন ১ হাজার ৫৯ জন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা ১৫টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভা ১৪ হাজার ১২৮ জন, নতুন ২ হাজার ৪০৪ জন। শাহরাস্তি উপজেলা ১০টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভা ৬ হাজার ৯৩৬ জন, নতুন ৭৯০ জন। মতলব দক্ষিণ উপজেলা ৬টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভায় ৫ হাজার ৬২৯ জন, নতুন ৬৪০ জন। মতলব উত্তর উপজেলা ১৪টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভায় ১১ হাজার ৮ জন, নতুন ১ হাজার ৪১১ জন। হাইমচর উপজেলা ৬টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভা ৪ হাজার ৪৩২ জন, নতুন ৫০৬ জন। সদর উপজেলা ১৪টি ইউনিয়নের একটি পৌরসভা ১০ হাজার ৭৫৯ জন, নতুন ১ হাজার ২২৭ জন। শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ে ১৫টি ওয়ার্ডে ২ হাজার ৮৬১ জন, নতুন ৩২৬ জন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক গোলাম আজম বলেন, ভাতাভোগীদের এখন আর হয়রানির শিকার হতে হবে না। ব্যাংকে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না। একজনের টাকা অন্যজনে উঠাতে পারবেন না। মোবাইলে একটি মেসেজ যাবে। ওই মেসেজ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাদের কাছে গিয়ে টাকা উঠাতে পারবেন ভাতাভোগীরা।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার বলেন, বয়স্ক ভাতার তালিকায় গড়মিল অনেক আগে থেকেই। তবে ডাটাবেজের মাধ্যমে অনিয়ম অনেকটা কমে আসবে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই গড়মিলটা শুরু হয়। ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আগামী বছর থেকেই ইউনিয়ন তথ্য সেবার উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ভাতাভোগীরা ভাতার টাকা পেয়ে যাবেন। প্রত্যেক ভাতা ভোগীর একটি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন থেকে ডাটাবেজ সরাসরি সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হবে। যদি কারও বয়সের মিল না থাকে, তাহলে তিনি ভাতা পাবেন না।