নাটোরে বন্যায় তলিয়ে গেছে ৫০০ হেক্টর জমির আখ
নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া, ঈশ্বরদী ও লালপুর সদর ইউনিয়নের ১৮টি চরের ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়। লালপুরের নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশ আখের চাষাবাদ হয় এখানে। কিন্ত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ফারাক্কার পানি মিলে সৃষ্ট বন্যার কারণে এবার ডুবে গেছে ৫০০ হেক্টর জমির আখ।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে উৎপাদনে যাওয়া নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে এবার আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি পানিতে আখ তলিয়ে যাওয়ায় এবার অন্তত ১ লাখ মেট্রিক টন আখের ঘাটতি থেকে যাবে। ফলে আসন্ন মৌসুমে নর্থ বেঙ্গল চিনিকল কিভাবে উৎপাদনে যাবে এ নিয়ে শঙ্কিত কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত দুইদিনে ডুবে যাওয়া এসব চর ঘুরে প্রাথমিক অবস্থায় ফসলের ক্ষতি নিরূপণ করেছে লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের তথ্য মতে প্লাবিত জমির মধ্যে ৫০০ হেক্টর জমির আখ রয়েছে।
পদ্মা তীরবর্তী বিলমাড়িয়া, চর দিয়ারবাহাদুরপুর, দিয়ার শংকরপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, চর লস্করপুর, নওশারা সুলতানপুর, আরাজি বাকনাই, চাকলা বিনোদপুর, চর লালপুরসহ ১৮টি চরেই শীতকালীন আগাম সবজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আখ উৎপাদন হওয়ায় ফলে এবার আখের সঙ্গে সবজিও তলিয়ে গেছে।
চরজাজিরা গ্রামের শরন রায় বলেন, গত কয়েক মৌসুমে আখ উৎপাদন করে লোকসানের সম্মুখীন হয়েছি। লোকসান পুষিয়ে নিতে আখ সংগ্রহের পর জমিতে বাদাম আবাদের পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্ত জমি তলিয়ে যাওয়ায় আখ তো গেলই, পানি না কমা পর্যন্ত বাদামও রোপণ করতে পারবো না।
লালপুর বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের চর অধ্যুষিত এলাকার ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান জানান, তার এলাকার একটা চরেই কয়েক'শ পরিবারের বাস যারা আখ আবাদ করেন। শীত মৌসুমের আখ বিক্রির টাকাতেই তাদের সংসার চলে পরবর্তী কয়েক মাস। তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
নওসারা চরের কৃষক আব্বাস আলী নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের চুক্তিবদ্ধ আখচাষী। তিনি জানান, পদ্মার পানি তার ২৭ বিঘা আখের জমিতে প্রবেশ করেছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে কিছু আখ সংগ্রহ করা যাবে। কিন্ত পানি নামার কোন লক্ষণ নেই।
লালপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক ও ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম কয়েক হাজার আখচাষীকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নাটোর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাজহারুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ হেক্টর অর্থাৎ ৩ হাজার ৭৫০ বিঘা জমি আখ পানির নিচে রয়েছে যার ফলে নিশ্চিতভাবে আসন্ন মৌসুমে চিনির উৎপাদন কমে যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নতুন করে আখের জমি প্লাবিত হতে পারে। বিষয়টি চিনি শিল্প করপোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে।