ক্ষতিপূরণের লোভে সড়কের পাশে স্থাপনা নির্মাণ!

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নরসিংদী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মহাসড়কের দু’পাশে রাতারাতি গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

মহাসড়কের দু’পাশে রাতারাতি গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

চলতি বছরেই শুরু হওয়ার কথা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেন নির্মাণের কাজ। ছয় লেনের এই মহাসড়কের জন্য অধিগ্রহণ করা হবে সড়কের দুপাশের জমি। এ খবরে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশের মহাসড়কের দু’পাশে রাতারাতি গড়ে উঠছে অসংখ্য স্থাপনা। কয়েকটি চক্র অনুমোদনহীনভাবে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করে নির্মাণ করছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা।

বিজ্ঞাপন

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের এই প্রকল্পের নরসিংদী অংশে রয়েছে ৫২ কিলোমিটার এলাকা। চলতি বছর থেকেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে এই মহাসড়কের চারলেনের কাজ। এরই মধ্যে এই মহাসড়কটি ৬ লেনের কথা শোনা গেলেও তা এখনও পর্যন্ত এটি নিশ্চিত নয়। মহাসড়ক আইন অনুযায়ী সড়কের দুপাশের ১০ মিটার দূরত্বে স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের সময় সরকার থেকে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ লাভের আশায় মহাসড়কের দুপাশে নির্মিত হয়েছে প্রায় শতাধিক স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বাড়ি-ঘর, মার্কেট ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিগত ৪ থেকে ৫ মাস যাবৎ চলছে এসব বহুতল বিশিষ্ট নিম্নমানের স্থাপনা তৈরির কাজ।

স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার পরও চলছে বেশকিছু সংখ্যক স্থাপনা নির্মাণের কাজ। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী মহল এসকল নিম্নমানের স্থাপনা নির্মাণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা দিচ্ছেন বলে জানান এলাবাসীর। নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে রাতারাতি গড়ে উঠা এসব স্থাপনার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই এসব স্থাপনা নির্মাণের ফলে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের সময় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সরকার।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার চৈতন্যা এলাকার একটি ভবন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, তিনতলা এই ভবনটির মালিক শিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ খানের ছেলে তাপসের স্ত্রীর। উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে নিজে এটি তদারকি করছেন। কারখানা গড়ে তোলার জন্য ভবনটি নির্মিত করা হচ্ছে বলে জানান ওই শ্রমিক।

নির্মাণাধীন আরেকটি ভবনের এক শ্রমিক জানান, চারতলার এই ভবনের নীচে গরুর খামার হবে, উপরে হবে কমিউনিটি সেন্টার। ভাড়াও দেওয়া হবে। এক মাস আগে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

একইভাবে মহাসড়কের শিবপুরের কারারচর থেকে ভৈরব পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা স্থাপনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালীরা। তবে ঠিক কী ধরণের প্রতিষ্ঠান বা উদ্দেশ্যে এসব ভবন নির্মিত হচ্ছে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না স্থানীয়রা।

আবুল হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কিছুদিন ধরে রাতারাতি এসব ভবন নির্মিত হচ্ছে। এক তলা থেকে ৪ তলাবিশিষ্ট এসব ভবন নির্মিত হচ্ছে মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণের সময় অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের আশায়। এতে মহাসড়কের জমি অধিগ্রহণের সময় সরকারের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। প্রকৃত জমির মালিকরা একটা নির্দিষ্ট কমিশন পেলেও সরকারের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেবে জড়িত এসব চক্রের সদস্যরা।

স্থানীয়রা আরও জানান, এসব সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল জমির মালিকরা না জানলেও এসব চক্র জমি মালিকদের সাথে কমিশনের চুক্তিতে স্থাপনা গড়ে তুলছেন। জানা মতে বাড়িঘর বা ভবন তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয় কিন্তু এসব ভবন অনুমোদন ছাড়াই হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কতিপয় লোকজনও জড়িত থাকতে পারে। না হলে এসব ভবন কিভাবে নাকের ডগায় রাতারাতি গড়ে উঠছে? সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় বাঁচাতে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

নরসিংদী সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, সড়কের পাশের আগের অবস্থা ভিডিও রেকর্ডিং করে প্রকল্প পরিচালক দফতরে পাঠানো হয়েছে। চলমান এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে ১৬৪টি স্থাপনা মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও পৌর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে যাতে এসব স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা হয়। মহাসড়ক আইনের শর্ত উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানান, আমার লোকজন পাঠিয়ে একটি প্রতিবেদন (ভিডিওসহ) তৈরি করে সাবমিট করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী এই প্রতিবেদন ক্যাবিনেট স্যার বরাবর পাঠানো হয়েছে। আমি গত উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বলে দিয়েছে পৌরসভা এবং উপজেলা যাতে আবশ্যিকভাবে অনুমোদনহীন ভবনগুলো অপসারণের ব্যবস্থা করে।