পীরগাছায় প্রতারকের খপ্পরে প্রতিবন্ধীর পরিবার
রংপুরের পীরগাছায় আরজিনা খাতুন (২৭) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর পরিবার প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রতারক চক্রটি নিজেদের এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে আরজিনাকে হুইল চেয়ার, নগদ টাকা ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এ সময় তারা নাম নিবন্ধনের জন্য নগদ টাকা, আরজিনার জন্ম নিবন্ধন সনদ ও তার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতিবন্ধী আরজিনা খাতুন পীরগাছা উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের দাদন গুচ্ছগ্রামের মনছুর আলীর মেয়ে।
আরজিনার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জন্মের পর থেকে আরজিনা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতো। কিন্তু চার বছর বয়স থেকে তার হাত-পা সরু হতে থাকে। এ নিয়ে বাবা মনছুর আলী ও মা আমেনা বেগম চিন্তিত হয়ে পড়েন। দিন মজুরি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনও রকম সংসার চলে। এ জন্য শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর সাহস করে উঠতে পারেননি আরজিনা খাতুনের বাবা।
ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকা আরজিনাকে গ্রামের প্রবীণদের পরামর্শে কবিরাজের কাছে নিয়ে যান তার পরিবার। কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও তার কোনও উন্নতি হয়নি। আস্তে আস্তে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। এখন বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলাফেরা ও খাবার খেতে হয় আরজিনাকে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এসে নিজেকে ইসলামী রিলিফ নামে একটি এনজিওর কর্মী পরিচয় দেন। তিনি আরজিনাকে একটি নতুন হুইল চেয়ার, নগদ ১৬ হাজার ৯৬০ টাকা ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কথা বলেন। এজন্য আরজিনার নাম নিবন্ধন করতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। লোভে পড়ে আরজিনার পরিবার দেনা করে তার হাতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, আরজিনার মূল জন্ম নিবন্ধন সনদ ও তার মায়ের মূল জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) প্রতারক আশরাফুলের হাতে তুলে দেয়। পরে আরজিনার ভাতিজা রঞ্জুকে সাথে নিয়ে রংপুরে চলে যান তিনি। কিন্তু রংপুরের যাওয়ার পর আশরাফুলের সঙ্গে আরও ৫/৭ জন যোগ দিয়ে রঞ্জুকে হত্যার চেষ্টা চালায়। রঞ্জু কোনও রকম জীবন নিয়ে পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি ভাঙা হুইল চেয়ারে বসে আছে আরজিনা খাতুন। কিন্তু কোনও নড়াচড়া করতে পারছে না। শুধু মানুষের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে।
আরজিনার মা আমেনা বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমার মেয়ে একা চলাফেরা করতে পারে না। এতদিন হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতো। কিন্তু বর্তমানে হুইল চেয়ারটি অকেজো হয়ে গেছে। প্রায় ১০ বছর আগে আজিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার মেয়েকে হুইল চেয়ারটি দান করেন। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া কোনও সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। একটি হুইল চেয়ারের আশায় প্রতারকের খপ্পরে পড়েছি।’
আরজিনার বাবা মনছুর আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘একটি ভালো হুইল চেয়ারের অভাবে মেয়েটি চলাচল করতে পারছে না। কেউ একটি হুইল চেয়ার দিলে বড় উপকার হতো।’