পুলিশের ভুলে জেল: ১৮ বছর পর মামলা থেকে মুক্তি পেলেন বাবলু
অপরাধ না করেও পুলিশ ও আইনজীবীর ভুলে আসামি হয়ে ৫৯ দিন কারাভোগসহ ১৮ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকা বাবলু শেখকে অবশেষে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার(১৭ই অক্টোবর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দীক এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এ ঘটনায় দায়ী তদন্তকারী দুই পুলিশ ও তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইজিপিকে নির্দেশও দেয়া হয়। একই সঙ্গে বাবলু শেখকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দায়ী আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য আইনজীবী সমিতির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নাটোর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এপিপি মাসুদ হাসান আর আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শামীম উদ্দীন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনার তিনদিন পর জনৈক আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সিংড়া উপজেলার আচলকোট গ্রামের শ্রী দেব দাসের ছেলে শ্রী বাবুকে ৩নম্বর আসামি করা হয়। তৎকালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ১৫ই মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
পরবর্তীতে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর পুনরায় শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামি বাবুকে গ্রেফতার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান।
পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম হাবিবুর রহমান আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ১৬ই আগস্ট আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন বাবলু শেখ। পরে এ বিষয়ে নাটোর দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হলে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দীকের আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য প্রেরিত হয়। আজ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ শেষে বাবলু শেখকে বিচারক মামলা থেকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
রায় ঘোষণার পর বাবলু শেখ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করায় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর বাবলু শেখকে নিয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।