জেলা আ'লীগের তোপের মুখে পলক
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও জামাত নেতার ছেলের ভাগ্নেকে ছাত্রলীগ সভাপতি করায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে চটেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই জেলা আওয়ামী লীগের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধেও। বিগত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিতে সিংড়ার ইউপি চেয়ারম্যানদের বাধ্য করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নাটোর এন এস সরকারি কলেজ মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে এসব অভিযোগ করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল।
তবে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলককে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেননি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। মিলনায়তনের ভেতরে যখন আ’লীগে বর্ধিত সভা চলছিল তখন বাইরে পলকের বিরুদ্ধে চলছিল তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যানারে সিংড়ার নেতাকর্মীদের মিছিল ও প্রতিবাদ সভা। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান কামরান।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা আদেশ আলী সরদারের পক্ষে অবস্থান নেন। পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনও বিএনপি নেতা আদেশ আলীর পক্ষে সিংড়ার ১২টি ইউপির চেয়ারম্যানকে কাজ করার নির্দেশ দেন।'
নির্বাচনের সময় নৌকার পক্ষে সিংড়ায় প্রচারণা চালাতে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কোনো সহযোগিতা করেননি বরং দুর্ব্যবহার করেছেন। নৌকা বিরোধিতার অভিযোগ এনে সম্প্রতি সিংড়ায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন না করতে চিঠি দেওয়া হলেও তা মানেননি পলক। নিজে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হলেও অন্য নির্বাচনে নৌকা ও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পলক বেইমানি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন। এ সময় তিনি বলেন, পলকের অনুগত, সিংড়ার নেতারা দম্ভ করে বলেন, তারা কেন্দ্রের নির্দেশনাই মানেন না আর জেলার নির্দেশনাতো দূরের কথা।'
শিমুল আরও বলেন, ‘সিংড়া পৌর জামাত ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি রওশন আলী প্রতিমন্ত্রী পলকের দুলাভাই। জামাতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রওশনের ছেলে খালিদ হাসানকে পলক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বানিয়েছেন।
পলকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে উপস্থিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয় যে ভাই-ভাতিজা সবাইকে ঠাঁই দিতে হবে। এভাবে চললে একসময় দলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। দলের বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা দলে থাকতে পারবেন না আর মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে, সিংড়ায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলকে সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। অল্প সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট অর্জিত আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে।'
অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পলকের বক্তব্য নিতে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী রঞ্জিত কুমার জানান তারা ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন। পরে কথা বলবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে সিংড়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছে সিংড়া উপজেলা আ’লীগ। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত ছিলেন।