কেউ খবর নেন না গুরুদাসপুরের বিধবাদের
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বাসিন্দা হীরামন বেওয়া, মেহেরুন বেওয়া ও নাছিমা বেওয়া। পাঁচ বছর আগে তাদের ছিল সুখের সংসার। দিনমজুর স্বামীর রোজগারেই চলছিল তাদের দিন। তবে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় স্বামীর জীবন প্রদীপ। ফলে তছনছ হয়ে যায় এসব নারীদের জীবন-সংসার।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে পাঁচ বছর আগে ঘটে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৮ জন বাসযাত্রী যাদের ২৩ জন ছিলেন গুরুদাসপুরের বাসিন্দা।
এসব বিধবারা জানান, সেদিনের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা তাদের জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুর্ঘটনার প্রথম দুই বছরই তাদের খোঁজ নিয়েছিল প্রশাসন। এখন প্রতি বছর এই দিনে সাংবাদিকরা ছাড়া আর কেউ তাদের খোঁজ নেন না।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর বিকেল ৪টায় নাটোর আদালত থেকে একটি মামলার হাজিরা শেষে অথৈ পরিবহনের একটি বাসে চড়ে বড়াইগ্রামের বনপাড়া হয়ে গুরুদাসপুরে ফিরছিলেন ৩০ জন। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা কেয়া পরিবহনের একটি কোচের সাথে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৩৪ জন, পথিমধ্যে ২ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পর ২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ৪০ জন। নিহতদের মধ্যে বড়াইগ্রামের ১৩ জন, গুরুদাসপুর উপজেলার ২৩ জন ও অন্যান্য এলাকার ২ জন ছিলেন।
দুর্ঘটনায় গুরুদাসপুর উপজেলার শুধু সিধুলী গ্রামেরই ১৬ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে একই পরিবারের ৬ ভাই নিহত এবং এক ভাই আহত হন। আহত ভাই রহিম মণ্ডল পঙ্গু অবস্থায় এখনও বেঁচে আছেন। আর নিহত ছয় ভাইয়ের স্ত্রীরা বিধবা হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, হতাহতদের পরিবারগুলো এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নিহতরা জীবদ্দশায় মামলার ঘানি টেনেছেন। মামলা চালাতে বিক্রি করেছেন সহায় সম্বল। তাই দুর্ঘটনার পর পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে অনেকে স্বামীর ঋণ পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে বিধবারা শ্রমিক ও দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।
আরও জানা গেছে, দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল ২০ অক্টোবর। তবে দিনটিতে কোনও কর্মসূচি পালন করা হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুধীমহল কেউই স্মরণ করেননি দিনটি।
স্থানীয় ধারাবারিষা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২৩ জন নিহতের পরিবারের মধ্যে ১৬ পরিবারকে এক লাখ করে টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১৬ জন বিধবাকে ভাতার কার্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে অল্পকিছু সহায়তাও করেছেন ওই পরিবারগুলোকে।
চলনবিল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম আলী আক্কাস বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনে বছর ঘুরে সিধুলী গ্রামে গেলেই বোঝা যায় নিহতের পরিবারগুলো কতটা কষ্টে আছে। দেনায় জর্জরিত পরিবারগুলো সত্যিই জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে।’
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান, ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার কথা তিনি জানতেন না। তবে এখন নিহতদের পরিবারের খোঁজখবর নেবেন।
এছাড়া নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজও নিহতের পরিবারগুলোর খোঁজখবর নিয়ে সরকারিভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।