বৃদ্ধ বাবা-কাকার খবর রাখে না কোনো সন্তান

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দুই ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার ও অশ্বিনী চন্দ্র কর্মকার। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দুই ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার ও অশ্বিনী চন্দ্র কর্মকার। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

এক ভাইয়ের বয়স তখন ১৯, আরেক ভাইয়ের ১৭ বছর। বাবার হাত ধরে প্রথমে তারা ঢুকেছিলেন কামারশালায়। এরপর কেটে গেছে ৬৫ বছর। গরম লোহাকে ছাঁচে ফেলে নতুন আকৃতি দেয়া দুই ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার ও অশ্বিনী চন্দ্র কর্মকার বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। তবুও শুধুমাত্র জীবিকার তাগিদে এখনো তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। কারণ বৃদ্ধ বাবা-কাকার খবর রাখে না কোনো সন্তান।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের কর্মকারপাড়ায় তাদের বসবাস। ওই গাঁয়ের পথ ধরে সামনে এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশে চোখে পড়ে ছোট্ট একটি ঘর। দূর থেকে ভেসে আসে ঘরের ভেতরের লোহা পেটানোর শব্দ। সকাল-সন্ধ্যা এই ঘরেই কাজ করেন বৃদ্ধ দুই ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার ও অশ্বিনী চন্দ্র কর্মকার।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৬ অক্টোবর) পাঁকা ইউনিয়নের কর্মকার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি খুপরি ঘরে দুই ভাই কামারের কাজ করছেন। বড় ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার দা, হাঁসুয়া, বঁটি ও ছুরি পোড়ানোর পরে তাতে ধার দিচ্ছেন। আর ছোট ভাই অশ্বিনী চন্দ্র কর্মকার হাঁসুয়া পোড়াচ্ছেন। ক্লান্ত এই দুই বৃদ্ধ ভাই অসুস্থ শরীরে ভালো মতো কথাও বলতে পারছিলেন না।

বড় ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকারের বয়স এখন ৮৪ বছর। তিনি পাঁচ ছেলের বাবা। স্ত্রী বেঁচে আছেন। ভবেশ তার পূর্ব পুরুষের পেশা ধরে রাখলেও ছেলেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বর্ণকারের কাজ করেন। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজ রাখেন না। এই বয়সে আর্থিকভাবে সক্ষম অনেকেই বয়স্ক ভাতা পেলেও তার ভাগ্যে তা জোটেনি।

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে আশ্বিনী চন্দ্র কর্মকারের বয়স এখন ৮২ বছর। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তারা সকলেই বিবাহিত। স্ত্রী বেঁচে আছেন। কিন্তু কোনো সন্তানই তাদের খোঁজ রাখেন না। তিনি মাসে ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা পান। তা দিয়ে সংসার চলে না।

বড় ভাই ভবেশ চন্দ্র কর্মকার জানান, সন্তানরা খোঁজ রাখেন না। এ বয়সে তাই নিজেই কাজ করছেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে খেতে চান তিনি। কিন্তু এখন বয়স বেড়ে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। শরীরে রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে।

ছোট ভাই অশ্বিনী কর্মকার বলেন, ‘এখন আর ভারী কাজ করতে পারি না। কিন্তু তিনবেলা খাওয়ার জন্য কাজ করতে হয়।’

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, চলতি বছর আবেদনের সময় শেষ হয়ে গেছে। সামনে বয়স্ক ভাতা, ভিজিডি কার্ডের আবেদনের সময় আসলে ওই দুই ভাইয়ের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।