বিদ্যালয়ে হাঁটু পানি, জেএসসি পরীক্ষায় ভোগান্তির আশঙ্কা
নাটোর পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের মীরপাড়া ও তার আশপাশের এলাকাটি শহরের সবচেয়ে নিচু এলাকা। প্রতি বর্ষা মৌসুমেই একটু বৃষ্টিতে এসব এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এই এলাকাতেই অবস্থিত জেলার সবচেয়ে বড় মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়। আশ্বিনের টানা দুদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ ও সমগ্র ক্যাম্পাস এখন পানির নিচে।
সামান্য বৃষ্টি হলেই এমন জলাবদ্ধতা দেখা যায় স্কুলসহ এর আশপাশের এলাকাগুলোতে। আর এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় আবাসিক ছাত্রদের। বিদ্যালয়ে আসতে হলে পানির কারণে বেশ দূরেই যানবাহন থেকে নেমে পড়তে হয় তাদের। এরপর সেই ময়লা পানি পেরিয়েই তাকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয় বৃষ্টির মৌসুমে। আবার যারা রিকশা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন তাদের গুণতে হচ্ছে দিগুণ ভাড়া।
এদিকে, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে গত বছর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে একপাশে জিও ব্যাগ ফেলে বিদ্যালয়ে প্রবেশের উঁচু রাস্তা তৈরি করে দেয় জেলা প্রশাসন। তবে চলতি বর্ষায় পানিতে ভেসে গেছে সেসব জিও ব্যাগ। দ্রুত জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করা না হলে নভেম্বরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি পরীক্ষার্থীদের সীমাহীন ভোগান্তির শঙ্কা দেখা দিবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জেলার সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠের যখন এমন হাল, তখন জলাবদ্ধতা নিরসনের দায় এক বিভাগ আরেক বিভাগের ওপর দিয়েই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বিদ্যালয়টি পৌর এলাকায় স্থাপিত হওয়ায় নাটোর পৌরসভা যথাযথ কর্তৃপক্ষ হলেও মেয়র দেশের বাইরে অবস্থান করায় কোনো তড়িৎ সিদ্ধান্ত আসছে না। বিদ্যালয়টির পদাধিকারবলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। তবে তিনিও এ কাজের দায়িত্ব শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বিদ্যালয়ে যেতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা হাতে জুতো নিয়ে বের হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে। তাদের সকলের চোখেমুখেই বিরক্তির ছাপ। বিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকলে মনে হয় পানি থৈ থৈ মাঠটি যেন বিশাল এক পুকুরে পরিণত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যেতে বেঞ্চ দিয়ে সেতু বানিয়ে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ১২শ শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার কারণে উপস্থিতি কমে গেছে। শিক্ষকদেরও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় পানি নেমে যাওয়ার কোন পথ নেই। তার ওপর সামান্য বৃষ্টিতেই পানি মূল সড়ক থেকে বিদ্যালয়ের রাস্তা দিয়ে নামতে নামতে বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে।’
বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কেবিনেটের সাবেক সভাপতি কাওসার আহম্মেদ বলেন, 'আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েও এর কোন প্রতিকার পাইনি। আমরা অবিলম্বে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চাই।'
অভিভাবক ও নাটোর এস এস সরকারী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কে এম আলমগীর হোসেন বলেন, 'জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ মাত্রা অতিক্রম করেছে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হবে যদি জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান না করা হয়।'
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়ে জানান, জেএসসি পরীক্ষা আসন্ন। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করা হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
নাটোর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী শাহীন আলী জানান, বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য পার্শ্ববর্তী দুটি নিচু নালা দায়ী। নালাগুলো উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। অর্থ ছাড় সাপেক্ষে কাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, ‘বিদ্যালয়টির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় জলাবদ্ধতা নিরসনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও নাটোর পৌরসভাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন সেই নির্দেশনা মানা হয়নি তা জানি না।’