ফেসবুক লাইভ শেষে নারীর মৃত্যু, আসামি ৭
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভ শেষে বরিশালে শিরিন খানম (৩০) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। শিরিন খানমের ভাই ইউসুফ মৃধা বাদী হয়ে রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে এ মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আল মামুন মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মামলায় বরিশাল সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহীদুল্লাহ কবির, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী জনি, মারুফ, রনি, সদর রোড এলাকার কয়েস, আলাউদ্দিন আলো ও অজ্ঞাতনামা একজন করে আসামি করে মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।
মামলার তদন্তকারী এ কর্মকর্তা আরো জানান, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিরিন খানমের শরীরে কোন বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
জানা গেছে, বরিশাল স্টীমারঘাট জামে মসজিদের স্টল থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উৎখাতের নানা ষড়যন্ত্র আর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে রোববার (২৭ অক্টোবর) রাত ৯টা ৪ মিনিটে ফেসবুক লাইভে আসেন শিরিন। লাইভে ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড কথা বলেন তিনি।
ফেসবুক লাইভে শিরিন খানম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লঞ্চঘাটের মেডিসিন ব্যবসায়ী জনির স্ত্রী আমার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে লঞ্চঘাটের দোকানদাররা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিয়ে আমাকে শেষ করে দিয়েছে। ওপরের লোকরা সকালে এক কথা বিকেলে আরেক কথা বলে। রনি মেডিসিন হাউজের রনি বলেছেন জনির স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এজন্য আমার দোকান কেড়ে নিয়েছে লঞ্চঘাটের দোকানদাররা। দোকান উচ্ছেদ না করার জন্য আমি তাদের হাত-পা ধরে কান্না করেছি। সচী মেডিকেলের মালিক এই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের হাত-পা ধরেছি অনেক বার। তাকে বলেছি ভাই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করেন। আমাকে বাঁচান, আমার কি দোষ। কিন্তু আমার কথা শোনেননি কাউন্সিলর।’
শিরিন খানম বলেন, ‘কেউ আমাকে কিংবা আমার প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর চেষ্টা করেনি। জোর করে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেড়ে নিয়েছে তারা। তাদের কাছে আমি বার বার লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। যার প্রমাণ আমার ব্যাগে আছে। লঞ্চঘাটের ব্যবসায়ী কায়েস মিয়া, রনি আর জনির স্ত্রী এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিলে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শেষ করে দিয়েছে। ১ নভেম্বরের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না ছাড়লে জোর করে দোকানে তালা দেবে বলেছে তারা। আমারে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, জনি ও জনির স্ত্রী, রনি এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সচী মেডিকেলের মালিক কায়েস মিয়ার বিচারের দায়িত্বভার আমি আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম। এই কজন মিলে আমার জীবনটা শেষ করে দিলো। আমারে বাঁচতে দিলো না তারা। এদের অত্যাচারে আমি শেষ। আমি এর বিচার জনগণের কাছে দিয়ে গেলাম। জনগণ এর বিচার করবে। আমি সেই আশায় রইলাম। আপনারা আমাকে বাঁচান।’
এর পরপরই শিরিন তার নিজ ফার্মেসিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিরিন খানম জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘শিরিন খানমের মৃত্যুকে ঘিরে অনেক আলামতই পাওয়া গেছে তার ফেসবুক আইডি থেকে। শিরিনের ফেসবুক আইডি থেকে সংগ্রহ প্রতিটি লাইভ ভিডিও, স্ট্যাটাস, কমেন্ট ও শেয়ার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। সেই সঙ্গে আসামিদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।’