ভোলায় ইলিশের উৎপাদন কমে গেছে

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইলিশ। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ইলিশ। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

দেশে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তার এক তৃতীয়াংশ আসে ভোলা থেকে। ইলিশের প্রজনন মৌসুম ও ঝাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করায় ভোলায় প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে দাবি করেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

কিন্তু জেলে এবং ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিরূপ আবহাওয়ায় ইলিশ কমে গেছে। এছাড়া নদী ও সাগরে বছরে ৫ মাস ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় লোকসানে পড়েন তারা।

বিজ্ঞাপন

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভোলার বিভিন্ন নদী থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার এবং সাগর থেকে ৪০ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ কম পাওয়া গেছে।

সাধারণত ইলিশের মৌসুম শুরু হয় মে-জুন মাসে। জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে ভরা মৌসুম। অক্টোবরে মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পাড়ে সেজন্য ইলিশ শিকারে থাকে ৩ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইলিশের রেণু ঝাটকায় পরিণত হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নদীতে ঝাটকা ছাড়া কিছু থাকে না। আর এই ঝাটকা ধরাও বেআইনি। মার্চ-এপ্রিল ২ মাস নদীতে নামাই নিষিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

মৌসুমের শুরুতে মে-জুনে প্রচণ্ড তাপদাহ থাকায় নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দেয়। এ সময় সাগরে কিছু ইলিশ থাকলেও তা শিকারে থাকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ভরা মৌসুমে ব্যাপকহারে বৃষ্টিপাত হলে কিংবা অমাবস্যা-পূর্ণিমায় মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এই কয়দিনের ইলিশে পুরো বছরের জাল, নৌকা, খাওয়া, তেলসহ অন্যান্য খরচ উঠাতে পারেন না জেলেরা।

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম।

ভোলা জেলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন, ঢালচরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলেরা জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ইলিশ কম পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।

সামরাজ মৎস্য ঘাটের জেলে ফরিদ বলেন, ‘একটা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গেলে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। এই ট্রিপে ৫০ হাজার টাকা পাইছি, আড়াই লাখ টাকা লোকসান হইছে।’

জেলে মঞ্জু ফরাজি বলেন, ‘ইলিশের মোট সিজন থাকে ৭ মাস। এর মধ্যে ৫ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। নদীতেও মাছ থাকে না। যে কারণে আমাদের লোকসান হয়।’

ঢালচরের ইলিশ ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, `এই বছর আমি দুই কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। কিন্তু পেয়েছি ২০ লাখ টাকা। বাকিটা লোকসান।’

ভোলা জেলে সমিতির নেতা মো. এরশাদ বলেন, ‘অক্টোবরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ। এখন নদীতে মাছ নাই। এ বছর গত বছরের চেয়ে মাছ অনেক কম হইছে।’

ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, ভোলা থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গেছে। যা কম। আগামী অর্থবছরে আরও বেশি ইলিশ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ভোলার ১ লাখ ৩২ হাজার নিবন্ধিত জেলে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ইলিশ সংগ্রহ করে বরিশাল, চাঁদপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।