ঠাকুরগাঁওয়ে শীতকালীন সবজির সমাহার
কৃষিতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের একটি জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে শীতকালীন সবজি। এখানকার মাটি দোআঁশ ভাবপূর্ণ ও কৃষির জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও মাঠজুড়ে শুধুই শীতকালীন সবজির সমাহার। ব্যাপকহারে হয়েছে এই সবজির আবাদ।
ফুলকপি ও বাঁধাকপি, মুলা, করলা, বেগুনসহ নানা ধরনের ফসল আবাদ হচ্ছে এই জেলার মাটিতে। ব্যাপক হারে ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় অনেকটাই লাভবান হচ্ছেন জেলার কৃষকরা। একই সঙ্গে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) জেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে, এবছর জেলার অনেক কৃষকই করছেন শীতকালীন সবজির আবাদ। কেউ করছেন নিজের জমিতে, কেউবা করছেন অন্যের জমি লিজ নিয়ে। সবজির ফলন ভালো ও দাম পাওয়া যাচ্ছে অনেকটাই। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফারাবাড়ি, বাসিয়াদেবী, নারগুণ, আঁকচাসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠজুড়ে এখন শুধু সবজি আর সবজি।
প্রতিদিন সকালেই ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন কৃষক ও শ্রমিকরা। সেখান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। পাশাপাশি ট্রাকে করে এ সবজি চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন।
এখানকার কৃষকরা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও একটু আগেই শীতের সবজির চাষ শুরু করেছেন তারা। তবে গতবারের তুলনায় এবার সবজির ফলন ও দাম পাওয়া যাচ্ছে ভালো। ফলে দিনের পর দিন আগ্রহ বেড়েই চলছে শীতকালীন সবজির আবাদ।
শহরের বাসিয়াদেবী এলাকার কৃষক ইমামুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রতিবারই করা হয় শীতকালীন সবজি। তবে গতবারের তুলনায় এবার সবজির ফলন বেশি হয়েছে। একই সঙ্গে দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। আশা করছি এবার অনেকটাই লাভবান হওয়া যাবে।’
একই এলাকার আরেক কৃষক আবুল কাশেম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রায় দুই একর জমিতে লাউ করছি। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। তবে ফলন ভালো হওয়ায় এখন পর্যন্ত অনেকটাই ভালো দাম পাচ্ছি। আশা করছি, বাকি সবজি বিক্রি করে অনেকটা লাভবান হতে পারব।’
সদর উপজেলার চামেশ্বরী গ্রামের মেহেদী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে জৈব পদ্ধতিতে সবজির আবাদ করছি। এর মধ্যে করলা, লাউ, শসা, বেগুন, ঝিঙাসহ বেশ কিছু সবজির আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত এই সবজি আবাদ করে পাঁচ লাখ টাকার উপরে আয় হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বাইরেও রফতানি হচ্ছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বীজ সার অন্যান্য কীটনাশক দ্রব্যাদি সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষকরা সকল ধরনের কৃষি উপকরণগুলো পাচ্ছে। যার ফলে এবারও জেলায় প্রচুর পরিমাণ সবজি আবাদ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জেলার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে শুধু দেশের বিভিন্ন জায়গায় নয়। বরং বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।’