লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু বাড়ছে

  • মোকাম্মেল মিশু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলায় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এই রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় হতাশ খামারিসহ গরু মালিকরা। প্রতিদিনই আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা শুধু পরামর্শ আর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েই দায়িত্ব পালন শেষ করছেন। তবে এ রোগের ভ্যাকসিন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ১৯২৯ সালে প্রথম আফ্রিকার জাম্বিয়ায় এ রোগ দেখা যায়। পরে তা আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে এবং ২০১৪-২০১৫ সালের দিকে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাকিস্তানসহ আশপাশের দেশে দেখা যায়। ২০১৬ সালে লাম্পি রোগ গ্রিস, সাইপ্রাস, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, কসোভোতে ছড়ায়। চলতি বছর এশিয়া মহাদেশের চীন ও ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যমগুলো হলো- এডিস মশা ও মাছি। গরুর লালা থেকেও এ রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গাভী থেকে বাছুর দুধ পান করলে সেই বাছুরও আক্রান্ত হতে পারে।

আক্রান্ত গরুকে যে সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দেয়া হয় সেটি দিয়ে সুস্থ গরুকে ইনজেকশন দিলেও ছড়াতে পারে। খামারে কাজ করা মানুষের পোশাকের মাধ্যমে আক্রান্ত গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভাইরাস আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন এই রোগের অন্যতম বাহন।

বিজ্ঞাপন

ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত মুখের মধ্যে, পায়ে এবং অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।

ভোলা সদরের চরসামাইয়া এলাকার গরু খামারি মো. সাহাবুদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুর খামারি খলিল মিয়া জানান, জেলার অর্ধেক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত।

ভোলা সদরের ইলিশা এলাকার গরু খামারি মো. মনির জানান, প্রথমে গরুর চামড়ার উপরিভাগে টিউমারের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তা পক্সের (জলবসন্ত) মতো গুটি গুটি হয়ে গরুর শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ছে। দু/এক দিনের মধ্যে প্রাণীর সারা শরীরে তা বড় বড় হয়ে ফেটে গিয়ে ঘা সৃষ্টি করছে। রোগাক্রান্ত গরু কিছু খায় না।

তিনি জানান, প্রাণী সম্পদ অফিস আক্রান্ত গরুকে মশারির ভেতর রাখা, বেশি পরিমাণ পানি ও ভাতের মার খাওয়ানো এবং জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।

জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা, ভোলা জেলায় গরুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ২০টি। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাণী সম্পদ বিভাগ জেলায় ৩০১টি আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। দিন দিন আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেড়েই চলছে।

ভোলা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিত কুমার মণ্ডল জানান, এটি একটি ভাইরাস রোগ। গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দুই পায়ের মাঝ স্থানে পানি জমে। শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি সরকারের নজরে আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে লাইভস্টোক রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে এর প্রতিষেধক ভ্যাকসিন তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।