নওগাঁয় ১০ টাকায় বিশুদ্ধ পানি
বিশুদ্ধ পানির সমস্যা বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরের শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পরে বরেন্দ্র অঞ্চলটির সাধারণ জনগণ। আর বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে বরেন্দ্র অধ্যুষিত তিন উপজেলায় তিনশটি সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে বসানো হয়েছে পাম্পগুলো।
পানি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতিজন থেকে নেওয়া হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা। আদায়কৃত অর্থ থেকে সংশ্লিষ্ট মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ও পাম্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা ঠা ঠা বরেন্দ্র অধ্যুষিত এলাকা। এ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর এতটাই নীচে যে এসব এলাকায় যুগ যুগ ধরে কোন নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় নি। কাজেই এসব এলাকার মানুষ মাটির কুয়া এবং পুকুরের পানি খাওয়াসহ সকল কাজেই ব্যবহার করত। কুয়ার পানি এবং পুকুরের পানি সব সময় অপরিষ্কার এবং নোংরা থাকতো। কাজেই বাধ্য হয়ে গভীর কুয়া থেকে পানি উত্তোলন এবং দূর থেকে পুকুরের পানি এনে সংসারের যাবতীয় কাজ করতে কষ্ট পোহাতে হতো অঞ্চলটির মানুষজনদের।
আর সাধারণ মানুষের কথ চিন্তা করে তিন উপজেলায় তিনশটি পাম্প বসানো হয়েছে। এসব পাম্প থেকে ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের মধ্যে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী এবং এলাকার সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।
কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি পাড়ায় একটি করে সাবমারসিবল পাম্প ও তিন হাজার লিটারের ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে। ট্যাংকি পাইপলাইনের সঙ্গে সংযোগ করে পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। একটি ট্যাংকি থেকে সংশ্লিষ্ট পাড়ায় পৃথক ৮টি স্থানে ট্যাপ সংযোগ করে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজশাহী-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাধীন নিম্ন পানির স্তর অধ্যুষিত এলাকায় কমিউনিটি ভিত্তিক পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে তিনশটি পাম্প স্থাপন করতে মোট খরচ হয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় একই ধরণের পাম্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী।
এবিষয়ে সাপাহার উপজেলার ওড়নপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক, আব্দুর রশিদ, এন্তাজুর রহমান, শিউলি বেগম এবং মর্জিনা খাতুন জানিয়েছেন, তারা বংশ পরম্পরায় এসব মাটির কুয়া এবং পুকুরের পানি পান সহ রান্নার কাজে ব্যবহার করে আসছেন। গভীর কুপ থেকে পানি উত্তোলন এবং অনেক দুর থেকে পুকুরের পানি বয়ে আনতে যেমন কষ্ট হয় অন্যদিকে এসব নোংরা পানি পান করার ফলে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে শিশুদের নানারকম রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতো। বর্তমানে সাবমারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় পানি সরবরাহের ফলে একদিকে যেমন পানির সংকট নিরসন হয়েছে অন্যদিকে তারা রোগের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছেন।