বেহাল দশায় সাটুরিয়ার তাঁত শিল্প
তাঁতের খট খট শব্দে এক সময় সকালের ঘুম ভাঙতো তাঁতপল্লীবাসীর। সিল্কের তৈরি জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবি, ওড়না, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় বুননের কাজ চলত সকাল থেকে রাত অবধি।
তবে আজ এই শব্দ শুধু পৌরাণিক গল্প। বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তাঁত শিল্প। কাঠের তৈরি লাখ লাখ টাকার শত শত তাঁত যন্ত্র অলস দাঁড়িয়ে থাকলেও কাপড় বুননের কারিগর নেই। অর্থের অভাবে পূর্ব পুরুষের ওই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
আর এ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই তাঁত শিল্প। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে কারিগররা। লাভজনক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
প্রায় দুই যুগ আগেও মানিকগঞ্জে তাঁতি পরিবারের সংখ্যা ছিলো প্রায় ২২ হাজার। সে সময়ে চালু ছিল ১০ হাজার তাঁত। বর্তমানে যার সংখ্যা মাত্র ২ হাজারের মতো। বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হস্তচালিত তাঁত শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ এলাকার তাঁত মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাপড় তৈরির সুতা, শ্রমিকের পারিশ্রমিক এবং যানবাহনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে বাড়েনি কাপড়ের দাম ও চাহিদা। যে কারণে দিনের পর দিন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা।
সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানান, বর্তমানে বিলুপ্তির পথে বরাইদ এলাকার তাঁতশিল্প। উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। সরকারিভাবে অল্প সুদে বা বিনা সুদে তাঁত মালিকদের লোনের ব্যবস্থা করা হলে এই শিল্পকে পুনরায় বাঁচানো সম্ভব।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস জানান, বিসিক থেকে তাদেরকে লোন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকার শুধু তাঁতিদের নয় বরং সকল প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষদের সহজ শর্তে লোন দিচ্ছে। আর যারা লোন পায়নি তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।