ইটভাটার শ্রমিক থেকে চেয়ারম্যান, এখন কোটিপতি!
জীবনের তাগিদে কর্মের শুরুতে ইটভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন নুরুল আমিন। জনশ্রুতি রয়েছে ফসলি ক্ষেতেও হাল চাষ করেছেন। আবার চোরাকারবারিতেও জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। ১৯৯৬ সালে হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার)। কিন্তু জনগণের বিশ্বাস রাখতে না পারায় ২০০৩ সালে সদস্য ও ২০১১ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। তবে ২০১৬ সালে নুরুল আমিন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন।
এদিকে চেয়ারম্যান হওয়ার পর বদলে গেছে তার জীবন। দুর্নীতি আর অনিয়মের রাজত্ব গড়ে এখন কোটিপতিদের কাতারে তিনি। এতে সহযোগিতা করছে তার ছেলে আমিরুল ইসলাম জুয়েল, স্ত্রী নুরজাহান বেগম ও বড় ভাই গোলাম মাওলা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বানাচ্ছেন সম্পত্তির পাহাড়।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচএমএ খালেক মাস্টার সহ ৮ জন একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রশাসনের ১৩টি দপ্তরে এ অভিযোগ করেন তারা। গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগের স্থানীয় সরকারের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব দীপক চক্রবর্তী চেয়ারম্যানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য চিঠি দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরে নুরুল আমিন তার স্ত্রী-ছেলে ও নিজের নামে প্রায় দেড় হাজার শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ও শান্তিরহাট বাজারে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে দোকানভাড়া নিজেই ভোগ করছেন। বিনামূল্যের প্রত্যেকটি নলকূপ স্থাপনে জনসাধারণের কাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ছিলাদী ও কাঠালী গ্রামের মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ও বিধবাসহ সরকারি সব ভাতার কার্ড দিতে জনপ্রতি ৩-৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এতে সহায়তা করে আসছেন তার স্ত্রী। আবার ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে গ্রাহকের টাকা নিজেই উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছেন। গরিব-অসহায়দের না দিয়ে নিজের ঘরে ব্যবহার করছেন সরকারি বরাদ্দের সোলার প্যানেল।
বিদ্যুৎ সংযোগ ও বিনামূল্যে সরকারি ঘর পাইয়ে দিতে তার ছেলে জুয়েলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি সংযোগের জন্য ৬ হাজার ও ঘরের জন্য ২০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন ১০ লাখ টাকার সম্পত্তির হিসাব দেখালেও বর্তমানে চেয়ারম্যান প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, নুরুল আমিন এক সময় ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন। জীবিকার তাগিদে হাল চাষও করেছেন। কয়েকবার ইউপি নির্বাচনে সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েও জয়ী হতে পারেননি। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে প্রার্থিতা নিয়ে জোর করে বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
কুশাখালীর ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিন উদ্দিন বলেন, ‘আমাকে মেম্বার বানিয়ে দেবে বলে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। কিন্তু আমি মেম্বার হতে পারিনি। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের লক্ষ্মীপুরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফিউজ্জামান ভূঁইয়া জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে। এটি তদন্তেও সময় প্রয়োজন। তবে আগামী এক মাসের মধ্যে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।