ঠাকুরগাঁও হানাদার বাহিনী মুক্ত দিবস আজ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, ছবি: বার্তা২৪.কম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, ছবি: বার্তা২৪.কম

আজ ৩ ডিসেম্বর। একাত্তরের আজকের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল ঠাকুরগাঁও জেলা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তাদের সেই চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে আজকের এই দিনেই। জেলার শহর থেকে পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর আর বধ্যভূমি।

ঠাকুরগাঁও তখন ছিল মহকুমা নামে পরিচিত। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্গত। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ বলতে বলতে মুক্ত শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসে। এ সময় অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।

বিজ্ঞাপন
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি

ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তি বাহিনীর সাথে পাকিস্তানী বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয় জুলাই মাসের প্রথম দিকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা হানাদার বাহিনীর ঘাটির উপর আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বেশ কিছু ব্রিজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেয় তারা। দালাল রাজাকারদের বাড়ি ও ঘাটিতে হামলা চালায়। নভেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক অভিযান চালায়।

মুক্তি বাহিনীর যৌথ অভিযানে পঞ্চগড় মুক্তিবাহিনীর দখলে আসলে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যায়। এরপর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে। মিত্রবাহিনী যাতে ঠাকুরগাঁও দখল করতে না পারে সেজন্য পাকসেনারা ৩০ নভেম্বর ভূল্লি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভূল্লি ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।

বিজ্ঞাপন

১ ডিসেম্বর ভূল্লি ব্রিজ পার হলেও মিত্রবাহিনী যত্রতত্র মাইন থাকার কারণে ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় শত্রুদের মাইনে ২টি ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর মাইন অপসারণ করে মিত্রবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। ২ ডিসেম্বর সারারাত প্রচণ্ড গোলাগুলির পর শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে। ৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও। তখন মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ মিছিল নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরে প্রবেশ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেয়। বিজয় ছিনিয়ে আনতে ১০ হাজার নারী পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ২ হাজার মা-বোন।

ঐতিহাসিক ভূল্লি ব্রিজ

ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরোদ্দোজা বদর,বলেন, আজ থেকে ৫৯ বছর পূর্বে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত হয়। ৩০ নভেম্বর পাক বাহিনী ভূল্লি ব্রিজের কাছে অবস্থান নেয়, সেখানে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে না পেরে পরে ঠাকুরগাঁও শহরে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা, মিত্র বাহিনী ও গেরিলা বাহিনী তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে তারা ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যায়।

জেলা উদীচীর সভাপতি সেতেরা বেগম, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে আসছি। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, শোভাযাত্রা সহ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, উদীচীর পক্ষ থেকে জেলা প্রতিবারেই এই দিনে একটি বড় আয়োজন করা হয়। সেখানে সকলে মিলে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।