মহাসড়ক উন্নয়নের ধুলায় ধূসর টাঙ্গাইল

  • অভিজিৎ ঘোষ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মহাসড়ক উন্নয়নের ধুলায় ধূসর পুরো শহর/ ছবি: বার্তা২৪.কম

মহাসড়ক উন্নয়নের ধুলায় ধূসর পুরো শহর/ ছবি: বার্তা২৪.কম

টাঙ্গাইলে বায়ু ও শব্দ দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ, পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ, খোলা অবস্থায় বালুবাহী ট্রাক চলাচল, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা, পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ু ও শব্দদূষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে চার লেনের উন্নয়ন চলছে। এতে মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ তৈরি হয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা, কালিয়াকৈর, গোড়াই, মির্জাপুর, ধল্লা, জামুর্কি, নাটিয়াপাড়া, করটিয়া বাইপাস, রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রতিনিয়ত বায়ুদূষণ হচ্ছে। পরিবহন চলাচল করায় ওইসব এলাকাগুলোতে বিপুল পরিমাণ ধুলা উড়ে অন্ধকারের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জেলার ভূঞাপুর হতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়া বালুবাহী ট্রাকগুলো থেকে বাতাসে বালু মিশে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব) থেকে ভূঞাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধুলায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণের ফলে বায়ুদূষণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে ইটভাটা তো রয়েছেই। অন্যদিকে জেলায় পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শব্দ দূষণ বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন
মহাসড়কে উড়ছে ধুলা/ ছবি:বার্তা২৪.কম 

জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চললেও বায়ুদূষণ রোধে সড়কে পানি ছিটানো হয় না। বড় অট্টালিকা নির্মাণে বায়ুদূষণ রোধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জেলার ভূঞাপুর ও কালিহাতীতে যমুনা নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহনের ফলে মারাত্মক বায়ুদূষণ হচ্ছে। এতে আঞ্চলিক ও মহাসড়কে বালুবাহী পরিবহন চলাচলের সময় বালু উড়ে বায়ুদূষণ করছে। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরসহ জেলার প্রত্যেক পৌরসভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় সেগুলো সড়কের পাশে ফেলায় ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, অব্যাহতভাবে মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষণের ফলে চরম ক্ষতি হচ্ছে। এক দিকে পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ও সড়ক-মহাসড়কে ধুলার কারণে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ হচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে শিশুসহ অসংখ্য মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে সরকার দ্রুত উদ্যোগ না নিলে অবস্থা আরও ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাবে।

বিজ্ঞাপন
বড় যানবাহন চলাচলে এভাবেই ধুলা বাতাসে মিশে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) টাঙ্গাইল অঞ্চলের গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, যানজট ও মহাসড়কের টাঙ্গাইলের বাইপাসে অনেক পরিবহন চলাচলে বায়ুদূষণ হচ্ছে। পাশাপাশি যে বড় অট্টালিকা তৈরি হচ্ছে, সেখানেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। এতে করে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মানুষের অ্যাজমা রোগটাও বৃদ্ধি পাবে। এটি নিরসনে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া যেটা তৈরি হয়েছে সেটা পরিবেশ অধিদফতরে জমা দেয়া হয়েছে। এখন সেটা নতুন করে নীতিমালা তৈরি করে পার্লামেন্টে পাস করলেই বায়ুদূষণ অনেকটা রোধ সম্ভব হবে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরিফ হোসাইন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বায়ুদূষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। দূষিত বায়ু শ্বাসনালী দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে রোগ থেকে বাঁচতে। ঢাকার সঙ্গে টাঙ্গাইলেও বায়ুদূষণ বেড়েছে। ইটভাটা ও পরিবহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এছাড়া সড়কে ধুলার কারণেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। বিআরটিএ বা প্রশাসন যদি পরিবহনের কালো ধোঁয়া বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে বায়ুদূষণ অনেকটা রোধ করা সম্ভব।