চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞাত চর্মরোগের প্রকোপ, নিশ্চুপ স্বাস্থ্য বিভাগ
চুয়াডাঙ্গার সদরের রাঙ্গিয়ারপোতা ও জীবননগর উপজেলার রতিরামপুর গ্রামের শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু অজ্ঞাত চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। দুটি গ্রামের এমন কোন পরিবার নেই যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়নি। সংক্রামক চর্মরোগে গত ছয় মাস আগে গ্রামের মেহের নিগার নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলেও গেছে। ভয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি আক্রান্ত পরিবারের সন্তানেরা স্কুলে গেলেও স্কুল থেকে তাদের বের করে দেওয়া হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানায়, দুটি গ্রামে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস করে। দুটি গ্রামের মধ্যে একমাত্র পানির উৎস একটি পুকুর। দুই গ্রামের সকলে এ পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পচা দুর্গন্ধযুক্ত ওই পানিতে গোসলসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় সকল কাজ করা হয়। আর পুকুর থেকেই এ রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি করছে গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, চর্মরোগের প্রতিকার ও চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জন ও চিকিৎসকেরা আসলেও তারা পরামর্শ বাদে তেমন কোন চিকিৎসা দেয়নি। এমনকি স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মীকেও তারা গ্রামে পাননি।
সংক্রামক এ রোগে আক্রান্ত এক স্কুল ছাত্রীর পিতা বারী শেখ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'চর্ম রোগে মেয়ের গোটা শরীরে এখন ঘা। মেয়ের বিয়ের জন্য কোন পরিবার দেখতে আসলে তারা মেয়েকে দেখে ভয়ে চলে যাচ্ছে।'
অজ্ঞাত এই রোগে মারা যাওয়া বৃদ্ধার পরিবারের সদস্যরা জানান, 'গ্রামে তাদেরকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। কেউ তাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে না।'
কুলসুম আরা নামের আরেক আক্রান্ত রোগী জানান, 'রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে গ্রামে আক্রান্ত রোগীদের একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হলেও লোকলজ্জার ভয়ে কেউ কারো কাছে রোগের বিষয়ে কিছুই বলছে না। এমনকি চিকিৎসকের কাছেও যাচ্ছে না।'
আশ্চর্যের বিষয় হঠাৎ করেই সংক্রামক এ রোগ দুটি গ্রামের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যাবার পর অনেক এনজিও নিজেদের সুবিধার জন্য আক্রান্ত রোগীদের সাহায্যে দেওয়ার আশায় ও বিভিন্ন চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে ছবি তুলছে। যা এক প্রকার প্রতারণার ফাঁদ বলছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'সরজমিনে চর্মরোগে আক্রান্ত ওই গ্রাম পরিদর্শন করা হয়েছে। ছত্রাক সংক্রমণ এই রোগ দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা।' এজন্য তিনি অসহায় মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানের সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহবান জানান। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
সংক্রামক চর্মরোগে আক্রান্ত দুই গ্রামবাসীর দাবি অচিরেই স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের গ্রামে আক্রান্ত রোগীদের সু-চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের সুস্থ করে তুলবেন। না হয় এ রোগ মহামারি আকারে রুপ নিবে।