সড়কে নিম্নমানের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন ঠিকাদার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-তালশহর-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক সড়কের ৮ কিলোমিটার সংস্কার কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের কাজের কারণে দফায় দফায় বাধা দিচ্ছেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তারপরও কোনো বিষয়ের তোয়াক্কা না করে অনেকটাই জোর করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার। নিম্নমানের কাজ বন্ধ করতে ইতিমধ্যে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ এলাকায় ৫টি ইউনিয়ন ও জেলা সদরের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র উপায় আশুগঞ্জ-তালশহর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কটি। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করে এই সড়কে।
রাস্তাটির সংস্কার কাজের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে দরপত্রসহ অন্যান্য সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২০১৮ সালের ১৬ জুন। সড়কটির কাজ পায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স লোকমান হোসাইন ও মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি)। এফ.ডি.ডি.আর.আই.আর.পি প্রকল্পের অধীনে আট কিলোমিটার এই সড়কের কাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী কাজ শুরু করার জন্য সময় ধরা ছিল ২৩ জুন ২০১৯ এবং কাজ শেষ করতে হবে ১৯ মার্চ ২০২০ এর মধ্যে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হওয়ার প্রায় ৬ মাস পর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কাজ শুরু করার পর থেকেই প্রশ্ন উঠে কাজের মান নিয়ে। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি একাধিক বার কাজ বন্ধ করে দেয়ার পরও নিম্নমানের পাথর, ইট, বালু, খোয়া ও ম্যাকাডম দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ৪ ডিসেম্বর এলাকাবাসী ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন নিম্নমানের কাজে বাধা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। জটিলতা সৃষ্টি হলে উভয় পক্ষের মাঝে এক সমঝোতা হয়। পরে আবারো ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেন।
এ দিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোকমান হোসাইন ও মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি) -কে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার না করতে চিঠি দেয় উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। তারপরও ঠিকাদার সড়কে নিম্নমানের কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন ঠিকাদার।
এই সড়কে চলাচলকারী আড়াইসিধা এলাকার হানিফ মিয়া জানান, যে মানের কাজ করা হচ্ছে এতে করে এই সড়কটি ছয় মাস টিকবে কিনা বুঝতে পারছি না। ঠিকাদার কাজ শুরু করার সময়ও ৬ মাস বিলম্বে কাজ শুরু করেছেন।
আরেক যাত্রী মো. ফারুক মিয়া বার্তা২৪.কম-কে জানান, রাস্তায় অত্যন্ত নিম্নমানের ম্যাকাডম দেওয়া হচ্ছে। পাথর ও বিটুমিনও অত্যন্ত নিম্নমানের। তাই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই রাস্তাটি যেন শিডিউল মোতাবেক করা হয়।
আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, দফায় দফায় ঠিকাদারকে সতর্ক করার পরও তিনি তার মতো করে নিম্নমানের কাজ করে যাচ্ছেন। কারো কোনো কথায় তিনি কান দিচ্ছেন না। উপজেলা ও জেলা প্রকৌশল বিভাগের যোগসাজশে এমন কাজ হচ্ছে। এভাবে কাজ চলার কারণে আমরা প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ দিয়েছি। নিম্নমানের কাজ অচিরেই বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে যাব।
এ ব্যাপারে এই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোকমান হোসাইন এন্ড মেসার্স মোস্তফা কামাল (জেভি) এর স্বত্বাধিকারী মো. লোকমান হোসাইনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আশুগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোসা. মরিয়ম আখতার বার্তা২৪.কম-কে জানান, নিম্নমানের কাজের বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু নির্মাণ সামগ্রীতে সমস্যা থাকার কারণে ইতিমধ্যেই আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি। তারপরও যদি ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমাদের কেউ নিম্নমানের কাজে সহায়তা করছে, বিষয়টি সঠিক নয়।