অসাধু চক্রের করাল গ্রাসে সোনামসজিদ বন্দর
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দরে চলছে চরম অচলাবস্থা। দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা এবং পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ফি আদায় করার সিদ্ধান্তই অচলাবস্থার মূল কারণ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। কিছু অসাধু ব্যক্তির স্বার্থে স্থলবন্দরে বিভিন্ন অনিয়ম ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ ও নিয়মমতো ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সকল অর্থ লেনদেনের নিয়ম বহাল করার আহ্বানও আমদানিকারকদের।
এই অচলাবস্থার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন স্থলবন্দরে কাজ করা কয়েক হাজার শ্রমিক। অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে প্রায় ২২ দিন ধরে বন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ রাখায় চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা বলছেন, পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপার্জনের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ভিক্ষার থালা নিয়ে পথে বসতে হবে।
পানামা কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই ট্রাক প্রতি ফি আদায় বন্ধ করে টন প্রতি ট্যারিফ আদায়ের নিয়ম করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র ও আমদানিকারকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে সোনা মসজিদ স্থলবন্দরে পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড ট্রাক প্রতি ৫’শ টাকা এবং পরে বাড়িয়ে ৭৮৩ টাকা আদায় করতো। হঠাৎ করেই গত ১২ নভেম্বর ৭৮৩ টাকা ফি এর পরিবর্তে টন প্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা হারে ট্যারিফ জমা দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। ফলে একটি ট্রাকে মোট ফি দিতে হবে আমদানিকারকদের সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. সালাহউদ্দিন জানান, দেশের ১৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে ১২টিতে টন প্রতি ট্যারিফ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র সোনামসজিদ স্থলবন্দরেই ট্রাক প্রতি ফি আদায় করা হয়ে থাকে। দেশের সকল স্থলবন্দর একই নিয়মে চালু করার জন্যই সরকারিভাবে টন প্রতি ট্যারিফ আদায়ের জন্য লিখিতভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভারত থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূর থেকে পাথর আনতে ট্রাক প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি দিচ্ছেন আমদানিকারকরা।
আমদানিকারকদের অভিযোগ, পূর্বের ৭৮৩ টাকা প্রতি ট্রাকের ফি দিয়ে প্রতি মাসে পানামার আয় হতো প্রতিদিনই ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৫’শ টাকা, মাসে আয় ৩৫ লক্ষ ২৩ হাজার ৫’শ টাকা, যা বছরে প্রায় ৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে বৃদ্ধি করে টন প্রতি ট্যারিফ হিসেবে প্রতিদিন আয় হবে ১২ লক্ষ টাকা, মাসে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা, বছরে ৪৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা প্রায়। গড়ে প্রতি বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ৩৯ কোটি টাকা প্রায় আমদানিকারকদের দিতে হবে পানামাকে। পানামার এই সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের জন্য চরম ক্ষতিকর বলে এই নিয়ম বাতিল করে নিয়ম মোতাবেক অর্থ লেনদেন এবং বিভিন্ন অতিরিক্ত ফি বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আমদানিকারকরা।
সোনামসজিদস্থল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর-রশিদ জানান, ২০১৪-১৫ সালে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩’শ ট্রাক পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতো। ৫ থেকে ৬ মাস আগেও ১২০ থেকে ১৩০ ট্রাক পণ্য বন্দরে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক পণ্য বন্দরে প্রবেশ করছে। ফলে বন্দরের শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে, স্তব্ধ হয়ে পড়েছে বন্দরের কার্যক্রম। বিভিন্ন ফি আদায় নিয়ম অনুযায়ীই হচ্ছে বলে জানায় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-(শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা.সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল বলেন, বন্দরটির গতিশীলতা ফেরাতে সব রকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতি মধ্যে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় বন্দর সংশ্লিষ্ট ও এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।