শুঁটকি নিয়ে সংকটে ব্যবসায়ীরা

  • নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চলনবিলের শুঁটকির কদর দেশজুড়ে, ছবি: বার্তা২৪.কম

চলনবিলের শুঁটকির কদর দেশজুড়ে, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভোজন রসিকদের কাছে এখনও স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয় চলনবিলের শুঁটকি। বৃহত্তর চলনবিলের শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। জাতীয় আয়েও অবদান রাখছেন তারা। শুঁটকি মাছ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ বরে এই এলাকার মানুষের। তবে এখন খুব একটা ভালো নেই তারা।

ভরা মৌসুমেও মাছের সংকট, সংরক্ষণাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় নাটোরের চলনবিলের শুঁটকি মাছ উৎপাদনকারী ব্যক্তি এবং এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা পড়েছেন বিপাকে।

বিজ্ঞাপন
চলনবিলের শুঁটকি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সিংড়ার নিংগইন এলাকার শুটকি পল্লী সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি শুঁটকির চাতাল। চিংড়ি, টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ মাছ সারি সারি বাঁশের বাতার চালায় বিছিয়ে রাখা হয়েছে। চালার পাশে বস্তায় বস্তায় ভরা শুঁটকি মাছ।

তবুও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত থাকা কারও মুখে হাসি নেই। কথা হলো শেরকোল ইউনিয়নের পুঁটিমারী গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী জহির উদ্দীনের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, পানি শুকিয়ে বিলে এখন শুধু কাদা। মাছ নেই। অল্প কিছু পুঁটি পাওয়া গেলেও, দাম চড়া।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে খলইয়ে কেজি দশেক পুঁটি উঠেছে। লবন মেখে দুই দিন পর প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

শুধু লবণ মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয়

আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, এখন চলনবিলে মাছ সংকট। আগে প্রতিটি বিল থেকে দেশি প্রজাতির শোল, টাকি, বোয়াল, টেংরা, পুঁটি, চান্দাসহ বিভিন্ন মাছ সংগ্রহ করা হতো। দিনরাত চাতালে ব্যস্ত থাকতে হতো। কিন্তু এবার মাছ নেই।

তিনি বলেন, মাছের আকালের কারণে শুঁটকি তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। মাছ বেশি বা কম হোক শ্রমিকদের নির্ধারিত টাকাই মজুরি দিতে হয়। সব মিলিয়ে শুঁটকি তৈরিতে খুব একটা লাভ হয় না।

চাতাল মালিক নাসির উদ্দীন জানান, কয়েক বছর আগেও শুঁটকির মৌসুমে দিনে অন্তত ৫০ কেজি মাছ কিনতেন। এখন মাছ পাওয়া যায় ২০ থেকে ২৫ কেজি। মাছের অভাবে আগের মতো শুঁটকি তৈরি হয় না।

শুঁটকি সংরক্ষণে হিমাগার ও প্রক্রিয়াজাতের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিংড়ার শুঁটকিপল্লীতে প্রতি মৌসুমে ৩০০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১৫২ মেট্রিক টন পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন সমস্যার এখানেই শেষ নয়। উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণে হিমাগার ও প্রক্রিয়াজাতের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এই অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার না করে শুধু লবণ মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রস্তুত করা হয়। তাই এসব শুঁটকি বেশি দিন ঘরে ফেলে রাখা যায় না।

প্রতি মৌসুমে ৩০০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়

ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, এ অঞ্চলের শুঁটকি শিল্প বাঁচাতে হলে হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে।

নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সিংড়ার কৃষি ও মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণে ইতোমধ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এতে মাছ সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা ও অবকাঠামোগত সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। এটি বাস্তবায়িত হলে শুঁটকিসহ মাছকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বিপ্লব সূচিত হবে।