‘ঔষধি’ ইউনিয়নে অ্যালোভেরা বিপ্লব
নাটোর শহর থেকে পূর্বদিকে সদর উপজেলার লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চাষ হয় প্রায় একশ জাতের ভেষজ উদ্ভিদ। এসব গ্রামে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ভেষজ উদ্ভিদের নাম অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত অ্যালোভেরা বিক্রি হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
ইউনিয়নের ১৬টি গ্রামের ১২টিতে আংশিক ও ৪টি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয় অ্যালোভেরা। তবে শুরুটা সহজ ছিলো না। ১৯৯৫ সালে আফাজ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি প্রথম এই গ্রামে অ্যালোভেরার চারা এনে রোপণ করেন। চার মাস পর পাতা গজানো শুরু হলে তিনি বাজারে বিক্রি শুরু করেন।
শহর থেকে তখন শরবত বিক্রেতারা অ্যালোভেরার পাতা কিনে নিয়ে যেতেন। প্রথমে স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অ্যালোভেরা চাষের কলেবর।
অ্যালোভেরায় সফলতার পর গ্রামবাসী একের পর এক বিভিন্ন জাতের ভেষজ গাছ লাগাতে শুরু করে। এক সময় এখানে ঘটে ভেষজ বিপ্লব, নাম হয়ে যায় ‘ঔষধি’ ইউনিয়ন।
চাষিরা জানান, একটি অ্যালোভেরা চারা গাছের দাম ৩০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ১২ হাজার গাছ লাগানো যায়। বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি করে টিএসপি ও পটাশ সার প্রয়োগ করে অ্যালোভেরা জমি প্রস্তুত করতে হয়। জমিতে চারা রোপণের তিন মাস পর থেকেই তোলা যায় পাতা। প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাসে ৪ বার একটি গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। ৩টি অ্যালোভেরা পাতার ওজন ১ কেজি। চাহিদা বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং বছরের অন্য সময়ে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় অ্যালোভেরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রতিদিন ৩০ টন অ্যালোভেরা ঢাকায় যায় এখান থেকে। এছাড়া বছরের অন্য সময় প্রতিদিন অ্যালোভেরার চাহিদা থাকে ১২ থেকে ১৫ টন।
চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি ১ একর জমিতে অ্যালোভেরা চাষ করেছেন। তবে পানি অ-সহিষ্ণু হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের অকালবর্ষণে নষ্ট হয়েছে ক্ষেত।
আরেক চাষি শাসমুজ্জামান জানান, দুই বিঘা জমিতে তিনি অ্যালোভেরা আবাদ করেছেন এবং প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিনশ কেজি ঢাকায় বিক্রি করেন।
বনলতা ভেষজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী কবির আহমেদ জানান, তিনি নিজের ৩ বিঘা জমিতে অ্যালোভেরার চাষ করেছেন। সপ্তাহান্তে অ্যালোভেরা তুলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও গাজীপুরের টঙ্গীর পাইকারদের নিকট তিনি বিক্রি করেন।
খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ভেষজ উদ্ভিদের চাষাবাদ আমাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা আরো বিস্তৃত চাষাবাদের সুযোগ চাই। কৃষিমন্ত্রী গ্রামগুলো পরিদর্শন করে আমাদের জন্য একটি বাজারের ব্যবস্থা করে দিলে নায্যদাম পেতে পারি আমরা।
ভেষজ গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উজ্জল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের চিকিৎসায় ভেষজ উদ্ভিদ সাশ্রয়ী ও উপযুক্ত হতে পারে।
আগামী দিনে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকেই উন্মোচন হবে বিজ্ঞাননির্ভর প্রাকৃতিক ঔষধ উৎপাদনের নতুন দিগন্ত-এমনটাই আশা করেন এই গবেষক।