নিজ জেলায় অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল

  • মোকাম্মেল মিশু,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মোস্তফা কামাল কলেজ/ ছবি:  বার্তা২৪.কম

মোস্তফা কামাল কলেজ/ ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ খেতাব পেলেও নিজ জেলা ভোলায় চরমভাবে অবহেলিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল। নতুন প্রজন্মের সামনে এই বীর সন্তানকে তুলে ধরতে কার্পণ্য দেখা যাচ্ছে। বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসেও তাকে যথার্থ সম্মান করা হয় না। তার নামে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কলেজটিরও জীর্ণ দশা। নেই বহুতল পাকা ভবন। মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘরও চলছে জোড়াতালিতে। নতুন প্রজন্মের সামনে তাকে তুলে ধরার জন্য ভোলা জেলা পরিষদ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুরে জন্ম নেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। একাত্তরের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য প্রাণ বিলিয়ে দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার/ ছবি: বার্তা২৪.কম

মেঘনা তার ঘর বাড়ি গিলে খেলে ১৯৮২ সালে সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামে ৯৩ শতাংশ জমির উপর একতলা একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারপর ২০০৪ সালে আলীনগরে প্রতিষ্ঠা করা হয় মোস্তফা কামাল কলেজ। ২০০৮ সালে নির্মিত হয় সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সুনজর না থাকায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল কলেজ দেখলেই বোঝা যায় অবহেলা কতটা চরম পর্যায়ের। এছাড়া স্মৃতি জাদুঘরে তার ব্যবহৃত একটি প্লেট ও বদনা ছাড়া অন্য কোনো স্মৃতি নেই। নেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পর্যাপ্ত বই-পুস্তক। যে কারণে দর্শনার্থীরা খুব একটা যান না জাদুঘরে। মোস্তফা কামাল ও তার স্মৃতি রক্ষায় এমন উদাসীনতায় হতাশ এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা বলেন, মোস্তফা কামাল আমাদের জাতির গর্ব কিন্তু এলাকাবাসী হিসেবে আমার মনে হয় সে অবহেলিত উপেক্ষিত। কারণ তার নামে যে সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো পরিচালনা করা হয় না সরকারিভাবে এবং তার জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকীর দিনগুলো ঠিকমতো পালিত হয় না।

বিজ্ঞাপন

গ্রন্থাগারে আগে বেশি পাঠক হতো, এখন কম হয় । অনেক কিছু না থাকার কারণে পাঠক এসে নিজেরাই ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান। এখানে বিভিন্ন বই থাকার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত বই নেই। বই রাখার মতো জায়গাও নাই। মোস্তফা কামালের আরও কিছু স্মৃতি যদি এখানে সংরক্ষণ করা যেত তাহলে অবশ্যই পাঠক আসতো।

গ্রন্থাগারের ভেতরে নেই পাঠক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

এছাড়া ২০০৪ সালে মোস্তফা কামালের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করার দীর্ঘ ১৪ বছর কলেজটি অবহেলিত ছিলো। গত বছর সশস্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে মোস্তফা কামালের মায়ের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কলেজটিকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এখন কলেজটিতে একটি ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন কলেজ অধ্যক্ষ।

মোস্তফা কামাল ও তার স্মৃতি রক্ষায় নতুন প্রজন্মের সামনে তাকে তুলে ধরার জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা রয়েছে বলে ভোলা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়। গত বছর ভোলা জেলা পরিষদের সাবেক সচিব মামুন আল ফারুক বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সাবেক সচিব বদলি হওয়ায় এখন পর্যন্ত সে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।