লক্ষ্মীপুরে ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি ১৫২ শিশু
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মীপুরে ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে এক মাস বয়সী থেকে ৪ বছর পর্যন্ত শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। গত ৮ দিনে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ১৫২ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত এসব শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে শয্যা সংকট থাকায় অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীকে সুস্থ করে তুলতে তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও নিউমোনিয়া-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে।
জানা গেছে, সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি বেড রয়েছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত ২৮ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগেও প্রায় ৩০ জন শিশু ভর্তি ছিল। এতে নতুন রোগীদের বেডে দেয়া যায়নি। অধিকাংশকেই বেড শেয়ার করতে হয়েছে। আবার অনেককেই মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আবিরনগর গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত দেড়বছরের শিশু রিফাত হোসেন, রাজীবপুর গ্রামের একবছর বয়সী শিশু রোহান, টুমচর গ্রামের পাঁচমাস বয়সী শিশু হাফছা ও চরভূতা গ্রামের ছয়মাস বয়সী শিশু মো. ওমরসহ প্রায় ৫০ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শয্যা সংকটের কারণে তাদেরকে অন্যান্য ওয়ার্ডের বেডে ও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে বেড সংখ্যা কম। অসুস্থ শিশুকে নিয়ে মেঝেতে থাকা কষ্টসাধ্য। একই কারণে মাঝে মাঝে বেডও শেয়ার করতে হয়। এতে শিশুকে চিকিৎসা করাতে এসে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
আবিরনগর গ্রামের রিনা বেগম জানান, তার ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রিফাতকে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুইদিন পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ছেলে সুস্থ হয়নি।
হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ মোরশেদ আলম হিরু জানান, গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ্মীপুরে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এজন্যই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই ৫০-৬০ জন শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তবে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৩-৪ দিনে ঠান্ডাজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে দেড় শতাধিক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগীকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট। কিন্তু শয্যা অনুযায়ী বাড়েনি চিকিৎসকসহ লোকবল। ৫০ শয্যার লোকবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসহ কার্যক্রম। তবে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে।