শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বপ্নপূরণে বাধা হয়নি মাসুদুরের
শারীরিকভাবে অক্ষম কিশোর মাসুদুর রহমান। জন্ম থেকেই তার দুই হাত নেই। কিন্তু অক্ষমতাকে হার মানিয়ে কিশোর মাসুদুর এখন স্বাভাবিক অন্য দশজনের মতো সবকিছুই করতে পারছে। দুচোখ ভরা স্বপ্ন, প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই কিশোর। নিয়মিত লেখাপড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের খেলাধুলাতেও অংশ নিচ্ছে সে। ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবে মাসুদুর।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার নাগেরগাতি গ্রামের বাসিন্দা সাহেব আলী ও হামেদা খাতুন দম্পতির সন্তান মাসুদুর রহমান।
মাসুদুরের মা হামেদা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, জন্মের পর মাসুদুরকে গলাটিপে মেরে ফেলতে বলেছিল প্রতিবেশীরা। কেউ কেউ পরার্মশ দিয়েছিল শিশুটিকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে ভিক্ষা করতে। মাসুদুরকে সত্তর হাজার টাকায় বিক্রি করে দিতেও প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমি সব প্রস্তাবই প্রত্যাখান করেছিলাম। অক্ষম মাসুদুরের খেলাধুলা ও পড়ালেখায় পারদর্শিতা দেখে মা-বাবা দুজনই মুগ্ধ এবং দারিদ্রতার তারা অনেকটা শংকিত বলেও জানান মাসুদুরের মা।
তার বাবা সাহেব আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও মাসুদুর তার নিজের আগ্রহেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এবার সে মেট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষা দেবে। খেলাধুলায় সে খুবই আগ্রহী এবং উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সে টিমের পক্ষ হয়ে খেলছে। তার ইচ্ছে বড় কোনো দলে প্রতিবন্ধী কোটায় খেলার। কিন্তু আমার অর্থ-সম্পদ বা ক্ষমতা কোনোটাই নাই।
তিনি বলেন, যদি আমার ছেলেকে কেউ আর্থিক সহযোগিতা করত, তাহলে সে অনেক ভালো কিছু করতে পারত।
মাসুদুরের কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, হাত না থাকার বিষয়টি মাসুদুরকে কোনো কাজেই পিছিয়ে রাখতে পারেনি। অন্যদের মতই সে খেলাধুলাসহ সবকিছুই করতে পারছে।
মাসুদুর নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় অধ্যয়ন করছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুরীর সঙ্গে কথা হলে তিনি মাসুদুর সম্পর্কে বলেন, জন্ম থেকে দুটি হাত না থাকার পরও স্বাভাবিক মানুষের মত সবকিছুই করতে পারছে। এমনকি ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাধুলাও সে করতে পারছে।
শারীরিক অক্ষম কিশোর মাসুদুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে সে বলে, নিজের শারীরিক অক্ষমতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে যাচ্ছি। হাত না থাকলেও লেখাপড়া কিংবা খেলাধুলা করতে আমার কোনো সমস্যা হয় না।
মাসুদুর কোনো ফুটবল ক্লাবে প্রতিবন্ধী কোটায় খেলার স্বপ্ন দেখার কথা জানিয়ে বলে, মা-বাবা গরিব। তারা কষ্ট করে আমাকে মানুষ করছেন। ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও সার্বক্ষণিক মায়ের সহযোগিতা পেয়ে হাত না থেকেও সব কাজ শেখা সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাসুদুরকে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান এবং তার পরিবারকে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণসহ সকল সুবিধা প্রদান করা হবে।