ফারুকের বাগানে চায়না কমলার হাসি
চুয়াডাঙ্গা থেকে ফিরে: কৃষক ওমর ফারুক। একজন সফল সবজি চাষি। চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নিধিকুন্ডু গ্রামের বাসিন্দা। সাত বছর আগে সবজি চাষের পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলেন নার্সারি। যেখানে আলাদাভাবে করেছেন চায়না কমলার বাগানও। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বাগানের আকার ও পরিধি। বর্তমানে এই কমলার বাগানের কারণে বেশ পরিচিতিও লাভ করেছে ওমর ফারুকের খান নার্সারি।
বাগান ঘুরে দেখা গেছে, হলুদ রঙে থোকায় থোকায় কমলা লেবুতে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান। যা দেখে যে কারোরই মন ভরে উঠবে। আর কমলা বাগানের জন্য বিখ্যাত ওমর ফারুকের খান নার্সারি দেখতে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে দর্শনার্থীরা।
কুষ্টিয়া থেকে বাগান দেখতে আসা মৌবনের জিএম মোশাররাফুল হক বকুল জানান, 'দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া অনুকূল না হওয়ায় সাধারণত চায়না কমলার ফলন ভালো হয় না। কিন্তু আমাদের সে ধারণা পাল্টে দিয়েছে এই এলাকার ফারুক খান। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই বাগান পরিদর্শনে এসেছি। বাগানে প্রতিটি গাছে কমলার ফলন দেখে আমরা অভিভূত হয়েছি।'
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা আশিকুজ্জামান রনি বলেন, 'আমি বৃক্ষপ্রেমী। বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে আমার বাগানে। এখানকার কমলা বাগানের কথা শুনে দেখতে এসেছি। কয়েকটা চারাও কিনে নিলাম।'
খান নার্সারির মালিক ওমর ফারুক তার বাগান থেকে উৎপাদিত কমলা লেবু বাইরে বিক্রি করেন না। খাওয়ার উপযোগী হলে ব্যক্তিগত ইচ্ছায় উৎপাদিত কমলা মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বণ্টন করে দিবেন ওমর ফারুক। তবে কমলার চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিটি কমলার চারা বিক্রি হয় ১০০ টাকা দরে।
কমলার চারা কিনতে আসা সাফিনা আনজুম জনি জানান, খবর পেয়ে এই বাগানে এসেছি। বাগানের কমলা দেখে আমি মুগ্ধ৷ আমাদের দেশেও সম্ভব? এতো সুন্দর, মিষ্টি ও সুস্বাদু কমলা উৎপাদন। তাই নিজেও ছোট একটা কমলা বাগান করবো বলে বেশ কিছু চারা কিনলাম।'
চায়না কমলা চাষি ফারুক খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আড়াই বছর আগে আমি খুলনায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে টবে চায়না কমলার চাষ দেখে সেগুলোর কলম করে আমার নার্সারিতে নিয়ে আসি। এক বিঘা জমিতে ১০০টি কমলা লেবুর চারা দিয়ে বাগান গড়ে তুলি। বাগানে কাজ করছে ১০-১৫ জন শ্রমিক। ভালো পরিচর্যার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে। তবে এবার পণ করেছিলাম বিনামূল্যে মানুষকে এই কমলা খাওয়াবো। তাই একটি কমলাও বিক্রি করিনি। এদিকে বাগানে প্রতিদিন ৫-৭শ মানুষ দেখতে আসে।'
তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত কমলা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের চায়না কমলার বাগান করার পরামর্শ দেন তিনি।
কৃষি বিভাগের প্রতি অভিযোগ করে ফারুক খান বলেন, কৃষি অফিসের কেউই আসে না এবং পরামর্শ কিংবা সহযোগিতা করে না। কৃষি বিভাগ যদি এই কমলা চাষের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা দেয় তাহলে মানুষের মধ্যে চায়না কমলা লেবুর চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে কমলা লেবুর উৎপাদন বাড়বে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লেবু বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে।