লঞ্চ মালিকদের কাছে জিম্মি পটুয়াখালীর মানুষ!
ঢাকা-পটুয়াখালী নৌ রুটে লঞ্চ রোটেশন প্রথার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরম আকার ধারণ করছে। এই রুটের ডাবল ডেকার যাত্রীবাহী লঞ্চের একটি কেবিন যেন সোনার হরিণ। আর পর্যটন মৌসুম হওয়ায় লঞ্চে কেবিন না পাওয়ায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদেরও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তবে সমস্যা সমাধানে স্থানীয়রা দফায় দফায় মানববন্ধন, সভা সমাবেশ করেও এর প্রতিকার পায়নি। তাইতো নৌ পরিবহন মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছে উপকূলবাসী।
ঢাকা-পটুয়াখালী নৌ-রুটে প্রতিদিন অন্তত ৪টি করে ডাবল ডেকার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের কথা থাকলেও অধিকাংশ দিন মাত্র দুটি করে লঞ্চ চলাচল করে। এর ফলে লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের যেমন অস্বাভাবিক চাপ থাকে তেমনি প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য লঞ্চগুলোর কেবিন পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। একটি কেবিনের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। শীত মৌসুমে কেবিনগুলোতে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করায় বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুর দিকে এ ভোগান্তি এখন সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানান এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মিত হচ্ছে একাধিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্প। এ কারণে এই এলাকায় দেশি-বিদেশি মানুষের আনাগোনা বেড়েছে কয়েকগুণ।
অপরদিকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম হওয়ায় এই সময়ে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। তবে সেই অনুপাতে বাড়েনি লঞ্চের সংখ্যা। এ কারণে কুয়াকাটায় আসতে ও যেতে পর্যটকদের নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। লঞ্চ মালিকদের অতি মাত্রায় মুনাফা অর্জনের প্রবণতা থেকেই এই জিম্মিদশা বলে জানান জেলার রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা।
পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পটুয়াখালী এবং ঢাকা থেকে এখন প্রতিদিন অন্তত চার থেকে পাঁচটি লঞ্চ চলাচল করা প্রয়োজন। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সভায় একাধিকবার দাবি তুললেও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। ফলে এবার শীতে এই সমস্যা সকল মাত্রা ছাড়িয়েছে।’
পটুয়াখালী নদী বন্দর কর্মকর্তা খাজা সাদিকুর রহমান জানান, ঢাকা-পটুয়াখালী নৌরুটে মোট ৯টি লঞ্চের রুট পারমিট দেয়া আছে। এসব লঞ্চ যাতে প্রতিদিন চলাচল করে সেজন্য কয়েক দফায় উদ্যোগও নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সফল হতে পারেননি। তবে এখনো বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের দাবি কেবিনের জন্য হাহাকার থাকলেও ডেকগুলোতে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকে না। এ কারণে রোটেশন প্রথায় তারা লঞ্চ পরিচালনা করছেন।
পটুয়াখালী-ঢাকা রুটে মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন এখনো পুরোপুরি লঞ্চ নির্ভর হওয়ায় রোটেশনের এই প্রথার কারণে শুধু যাত্রী ভোগান্তি নয়, এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।