সাগরতীরে উৎসবহীন বর্ষবরণ

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাগরতীরে পর্যটকদের ভিড়/ছবি: বার্তা২৪.কম

সাগরতীরে পর্যটকদের ভিড়/ছবি: বার্তা২৪.কম

রাত পোহালেই শুরু হবে নতুন বছরের পথ চলা। ৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর আহ্বানে ৩১ ডিসেম্বর রাতে পালন করা হয় থার্টি ফাস্ট নাইট বা বর্ষবরণ উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে পর্যটন শহর খ্যাত কক্সবাজার হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। বিগত এক দশকে এমন চিত্রই দেখা গেছে এখানে। তবে এবার প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। নেই আলাদা কোনো আয়োজন। আউটডোরেও উৎসবের অনুমতি মেলেনি। ইনডোরেও বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।

সূর্যাস্তের সঙ্গে হৈ হুল্লোড় থামানোর নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ। তবে এ নিষেধাজ্ঞায় আগত পর্যটকদের আনন্দে ভাটা পড়েনি। বিশাল সমুদ্র বালিয়াড়ি, নোনা জলের উত্তাল ঢেউ আর আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের মেরিনড্রাইভ ভ্রমণ তো আছেই পর্যটকদের জন্য।

বিজ্ঞাপন
পর্যটকদের মিছিল শুরু হয়েছে সাগর তীরে

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মৃদু শীতের পরশ। প্রকৃতির এই রূপ দেখতে প্রতি বছরের মতো এবারও থার্টিফাস্ট উদযাপনে কক্সবাজারে ছুটে এসেছে ৫ লক্ষাধিক পর্যটক। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই পর্যটকের মিছিল শুরু হয়েছে সাগর তীরের এই জেলায়।

শহরের পর্যটন জোনে হোটেল-মোটেলে ইতোমধ্যেই লাখো পর্যটক অবস্থান নিয়েছে। নতুন বছরকে ঘিরে অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটকদের ভ্রমণকে নিরাপদ করতে কঠোর পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। তবে উৎসবের আয়োজন না থাকায় হতাশ পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে ৫ লাখ পর্যটকের সমাবেশ ঘটবে কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে শহরের হোটেলগুলো প্রায় ৯০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। কক্সবাজারে এবার শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের ঢল নামে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য অনেক হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল কক্স টুডের পরিচালক আবু তালেব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে পর্যটকদের ঢল। এরই জেরে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের হোটেলে কোনো রুম খালি নেই।

অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় হতাশ ব্যবসায়ীরা 

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে দৈনিক প্রায়ে তিন লাখ লোকের থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া এসবের বাইরেও দুই লাখ মানুষ অ্যাপার্টমেন্টসহ বিভিন্নভাবে কক্সবাজারে অবস্থান করেন।

কলাতলী-মেরিনড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বার্তা ২৪.কমকে বলেন, কক্সবাজারকে ব্র্যান্ডিং করা মানে পুরো বাংলাদেশকে ব্যান্ডিং করা। ছোট অজুহাত দিয়ে সমুদ্রে তীরে উৎসবের অনুমতি না দেওয়ায় আমরা হতাশ। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে পর্যটকের জন্য উৎসবের আয়োজন করার দরকার ছিল। পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল।

পুলিশ সুপার সূত্র জানায়, এবারের থার্টিফাস্ট উপলক্ষে খোলা আকাশের নিচে কোনো আয়োজনের অনুমতি নেই। শুধু ইনডোরে প্রোগামের অনুমতি রয়েছে। ইনডোর প্রোগ্রামের জন্য অনুমতি নিয়েছে কিছু হোটেল কিন্তু তাতে তেমন একটা সাড়া পড়বে না বলে জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ হোটেল বুকিং হয়ে গেছে  

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সমুদ্রে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাতের বেলায় মোটরসাইকেলে ঘোরাফেরা, বিচে পর্যটন বেশে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি পোশাকধারী পুলিশও থাকবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবারের থার্টিফাস্ট উদযাপনে কক্সবাজারে প্রায় ৫ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটবে। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জেলা পুলিশ ইতোমধ্যে শহরকে ছিনতাইমুক্ত করতে কাজ করছে। এছাড়া পর্যটন জোনে বাড়ানো হয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশের সংখ্যা। লিংকরোড় থেকে সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত পুলিশ ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৬টি তল্লাশি চৌকি বসাবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচ কর্মীরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। ইভটিজিং, পর্যটকের হারানো জিনিসপত্র খোঁজার জন্য কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি কোনো পর্যটকরা সমস্যায় পড়বে না।