১০১ একরের নতুন কুঁড়ি
একশ এক একর। ছোট এক রঙিন স্বপ্নের নাম। মূল শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরের এ ক্যাম্পাসে আছে তপ্ত রোদ, মাথার উপর বিশাল আকাশ, ঝুম বৃষ্টি বিলাস, মেঘ সাদা কাশবন আর নীল দিঘী। আছে ময়না দ্বীপ, লন্ডন রোড, পদ্ম দীঘির পাড়, সূর্যাস্তের মোড়।
বঙ্গবন্ধু চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য অনুপ্রেরণা দেয় দেশকে নিয়ে নতুন করে ভালোবাসার। দেশের জন্য কিছু করার। শিক্ষার্থীরা এখানে স্বপ্ন বুনে।
এখানে নেই যান্ত্রিকতা কিংবা শহরের ন্যায় কোলাহল, নেই কোনো দূষণ কিংবা যানজট। এ যেন প্রকৃতির হাতে গড়া এক মায়াময় ক্যাম্পাস।
নোয়াখালী জেলার মূল শহর মাইজদি থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাপুর চরজব্বর সড়কের পশ্চিম পাশে ১০১ একর সুবিশাল ক্যাম্পাস নিয়ে গড়ে উঠে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে অতিবাহিত করেছে তার সাফল্যের ১৩ বছর। এই সাফল্যের নতুন সঙ্গী হতে যোগ হলো আরও কিছু নতুন কুঁড়ি (শিক্ষার্থী)।
গান আড্ডা আর নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয়েই যেন ব্যস্ত সবাই। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটি সত্যিই অনেক আনন্দের। চান্স পাওয়ার পর প্রত্যেকেই ক্যাম্পাসকে নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন, নানা পরিকল্পনা। প্রস্তুতি নিতে থাকে ক্যাম্পাসের প্রথম দিন কীভাবে কাটাবে এবং কী করবে। প্রবীণরাও প্রস্তুতি নিতে থাকে কীভাবে নবীনদের বরণ করে নেয়া যায়। প্রস্তুতি শেষে ওরিয়েন্টেশনের দিনেই সেটি প্রকাশ পায়। ভেসে যায় আনন্দের জোয়ারে।
এ বছরও ক্যাম্পাস মেতেছে এক উৎসবের আমেজে। নানা আয়োজন আর আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ।
নবীন শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করে। অনেকে আবার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে তাদের অভিভাবকদের। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের প্রবীণরাও এসেছেন সাজগোজ করে, নানা আয়োজনে নবীনদের বরণ করে নিতে। এসেছে শাড়ি, পাঞ্জাবি আর শার্ট-কোর্ট-টাই পরে। কারণ পরিবারে নতুন সদস্য এসেছে বলে কথা।
প্রত্যেক বিভাগেই পৃথক পৃথকভাবে বিভাগীয় প্রধানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ওরিয়েন্টেশন ক্লাস। অংশগ্রহণ করে স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষক ও নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। নবীনদের আপন করে নেয়া হয় রজনীগন্ধা আর গোলাপ শুভেচ্ছায়। চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান।
নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন স্ব স্ব বিভাগ থেকে বেরিয়ে আসে তখনই আনন্দের মাত্রা যেন আরও বেড়ে যায়। সবার হাতে হাতে ফুল, সবাই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। নতুন মুখ, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ আর নতুন এক পরিবার। সবাই ব্যস্ত এই মুহূর্তটাকে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করে রাখতে। কেউ যেন বাদ যেতে রাজি নেই।
নতুন ক্যাম্পাসে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এক নতুন জীবনের শুরু! সত্যিই এক অন্যরকম অনুভূতি। শহীদ মিনার, লন্ডন রোড, আকাশমণির হাট, লাইব্রেরি কিংবা নীলদীঘিতে বসে শুরু হচ্ছে একেক জনের জীবনের এ গল্প। আর এসব ছোট ছোট অনুগল্প জুড়েই তো তৈরি হবে ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিনের স্মৃতিকথা।