নাটোরে পরিকল্পিত রসুন উৎপাদন কমাবে আমদানি ঘাটতি

  • নাইমুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের এক-তৃতীয়াংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোরে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

দেশের এক-তৃতীয়াংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোরে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রতি বছর দেশে রসুনের চাহিদা ৫ লাখ মেট্রিক টন। যার এক-তৃতীয়াংশই উৎপাদিত হয় নাটোরে। দেশব্যাপী বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার রসুন বিক্রি হয় নাটোর থেকে। জেলার ৫ উপজেলায় চাষে ও ২ উপজেলায় বিনা চাষে রসুন উৎপাদিত হয়। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও পরিকল্পিতভাবে উৎপাদন করলে নাটোরের রসুন কমাতে পারে আঞ্চলিক মসলাজাতীয় ফসলের ঘাটতি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক এ কে এম হেলাল উদ্দীন জানান, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া গত ৮ বছরে জেলায় রসুন উৎপাদিত হয়েছে ১২ লাখ ৬২ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা জানান, বন্যার পানি নামার পর বা আমন ধান কাটার পর ভেজা জমিতে বীজ বপন করে খড় ছিটিয়ে রসুনের আবাদ হলো বিনা চাষের রসুন। গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে বিনা চাষে রসুন আবাদই জেলায় বৃহদায়তন রসুন উৎপাদনের কারণ। অপরদিকে, বীজ বপনের পর পরিমাণমতো টিএসপি, মিউরেট অব পটাশসহ অনান্য উপাদান প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুতের মাধ্যমে আবাদ হলো স্বাভাবিক আবাদ। এ পদ্ধতিতে নলডাঙ্গা, সিংড়া, লালপুর, বাগাতিপাড়া ও নাটোর সদরের বেশ কিছু এলাকায় রসুন আবাদ হয়।

চাষ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণে সহযোগিতা প্রয়োজন কৃষকের 

কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১-১২ মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ মৌসুমে ১৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১১ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১৫ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১৭ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ১৮ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ২৫ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ২৮ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদিত হয়।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পূর্বের বছরের তুলনায় ২০১২-১৩ মৌসুমে চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও আবাদ কমে যায় রসুনের। পরের বছর আবাদের পরিমাণ কমলেও উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। পরবর্তী তিন মৌসুমে আবাদের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে রসুনের উৎপাদন বাড়তে থাকে। ২০১৬-১৭ উৎপাদন মৌসুমে ২ লাখ ১ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয় নাটোরে যা এখন পর্যন্ত জেলার সর্বোচ্চ রসুন উৎপাদন। পরের বছর কৃষক উৎসাহিত হয়ে আবাদের পরিমাণ বাড়ালে কিছুটা কম রসুন উৎপাদিত হয়। হঠাৎ করে গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে কৃষক আবাদের পরিমাণ কমিয়ে দিলে উৎপাদন কমে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টনে নেমে আসে।

বাংলাদেশ মশলা গবেষণা ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, চাষ ও বিনাচাষের রসুনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। বরং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চাষের রসুনের সমান দামই পেয়ে লাভবান হয় কৃষক। নিঃসন্দেহে এ অঞ্চল থেকে রসুন উৎপাদন করা হলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ কৃষকদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হলে রসুনের বৃহদায়তন উৎপাদন সম্ভব হবে। আঞ্চলিত উৎপাদনে গুরুত্ব দিলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডীন প্রফেসর . মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশে রসুনের উৎপাদন ঘাটতি মোকাবিলায় নাটোরে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ও চাষ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ সহায়তার মাধ্যমে রসুন চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হলে এখান থেকে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে রসুন রফতানিও করা যাবে।