শিকলে বন্দী জীবন মুসলিমার!

  • শাকিল মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, শেরপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এভাবে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে মুসলিমাকে

এভাবে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে মুসলিমাকে

ছোট্ট একটি টিনের চালাঘর। তার ভেতরে খুঁটির সঙ্গে শিকল দিয়ে চার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে এক তরুণীর। শিকলের আঘাতে তার হাতে ও পায়ে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষত।

ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম, ওই চালাঘরের মেঝেতে সারাদিন শিকলে বন্দী হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। কাজ থেকে যখন মায়ের বাড়ি ফেরার পর কেবল শিকলবন্দী দশা থেকে মুক্তি মেলে তার।

বিজ্ঞাপন

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ১৬ বছর ধরে এমন নির্মম জীবনযাপন করে আসছে মুসলিমা আক্তার নামে এক তরুণী। ১৮ বছরের জীবনে প্রায় ১৬ বছর কেটেছে তার শিকলবন্দী হয়ে!

মুসলিমা নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের গুজাকুড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের মেয়ে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মুসলিমার মা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে।

তিনি জানান, মুসলিমা মানসিক প্রতিবন্ধী। নিজেই নিজের হাত-পায়ে কামড়ায়। শরীর থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলে। সুযোগ পেলেই দৌড়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কয়েকবার পানিতেও পড়ে গিয়েছিল। তাই ঘরের ভেতর শিকলবন্দী অবস্থায় রাখতে হয় তাকে।

অর্থাভাবে মেয়েকে ভালো কোন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি মনোয়ারা বেগম। স্থানীয় বিভিন্ন কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করিয়েছেন, তাতে লাভ হয়নি।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরিষার তেল, বাদাম, চানাচুর ও পান বিক্রি করেন মনোয়ারা বেগম। সেই আয় দিয়েই পেট চলে। মনোয়ারার নিজের নামে ৪ শতাংশ বসতভিটা রয়েছে। ছেলেদের সহযোগিতায় সেখানে কয়েকটি টিন দিয়ে ছোট্ট একটি একচালা ঘর তুলেছেন।

মনোয়ারার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। মেয়ে মুসলিমার দুই বছর বয়সে তার বাবা মারা যান। এরপর থেকে মনোয়ারা বেগম বাড়ি বাড়ি পণ্য বিক্রি করে সংসার চালান।

মুসলিমার ভাই মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার বোনের ছোটবেলা থেকেই অসুখ। আমরা গরিব মানুষ। অনেক ছোট-খাটো কবিরাজ ও ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কিন্তু অসুখ সারেনি। সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো আমার বোনটা সুস্থ হয়ে উঠবে।

নাছিমা আক্তার, উমেছা খাতুন, জুয়েলসহ কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, অনেকদিন ধরে মেয়েটার এমন সমস্যা। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার মা। মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা করালে হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, শনিবার সকালে আমি মেয়েটিকে দেখে এসেছি। তার পরিবারের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকাও দিয়েছি। তার ভাইয়ের চালানোর জন্য একটি ভ্যানগাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসলিমা আক্তারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা ও থাকার জন্য একটি ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করব।