প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত ঝিনাইদহের মৃৎশিল্পীরা
কদিন বাদেই হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী পূজা। এ উৎসবকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ জেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা গড়ে তুলতে দিন-রাত কাজ করছেন শিল্পীরা। পূজা ঘনিয়ে আসায় জেলার কারিগরদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
এখন চলছে বাঁশ, খড় আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমার অবকাঠামো তৈরি ও প্রলেপ দেয়ার প্রাথমিক কাজ। কাদামাটি দিয়ে পরম যত্নে দেবীর মুকুট, হাতের বাজু, গলার মালা, শাড়ীর নকশা, প্রিন্ট ও ঠাকুরের চুল তৈরি করছেন। এরপর প্রতিমাতে দেয়া হবে রংতুলির আঁচড়।
মৃৎশিল্পী পলাশ কুমার পাল বলেন, পূজার আর ১৪ দিন বাকি। এর মধ্যেই আমাদের সকল প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। বেশিরভাগ প্রতিমার কাঠামো, মাটির প্রলেপ দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন বাকি রয়েছে রংতুলির কাজ।
শহরের হামদত কালীতলা পূজা মণ্ডপে কাজ করা মৃৎশিল্পী সুজন পাল বলেন, এবছর তিনি ১০০টি প্রতিমা তৈরি করছেন। সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমাগুলো বিক্রি করা হবে।
দুর্জয় টিকাদার নামের এক মৃৎশিল্পী বলেন, এখন আবহওয়া ভালো থাকায় প্রতিমা তৈরি করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। রোদের কারণে প্রতিমাগুলো ভালোভাবে শুকানো যাচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যেই রংতুলির কাজ শেষে করে পূজারিদের প্রতিমা দিতে হবে। এজন্য দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলার ১ হাজারেরও মন্দিরে মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে সরস্বতি পূজা। এজন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যে সব মণ্ডপে পূজারির সংখ্যা বেশি হবে সে সব স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পূজা যেন নির্বিঘ্নে পালন করা যায় সে ব্যাপারে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিদ্যার দেবী সরস্বতী। শুভ্র তার গায়ের রঙ। সরস্বতী জ্ঞানে গুণান্বিত বলে তার গায়ের রঙ শুক্লবর্ণ অর্থাৎ দোষহীনা। পবিত্রতার মূর্তি আর জ্ঞানদান করেন বলে তিনি জ্ঞানদায়িনী। সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্র বসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। শিক্ষার্থীরাই এ পূজায় মনোযোগী হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরে ঘরে এবং মন্দিরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শাস্ত্রমতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনা করা হয়। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন।