মেহেরপুরে তিন ফসলি জমিতে অবাধে পুকুর খনন
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। এতে দিন দিন কমে আসছে আবাদি জমি। বিশেষ করে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করায় খাদ্য ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।
মেহেরপুর সবজি চাষ খ্যাত একটি জেলা। সবজির পাশাপাশি এখানে ধান, গম, মসুর, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা প্রকার ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। বছরের প্রায় সব সময় পাওয়া যায় সবজি। জেলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে সবজি চাষ। তবে মাছ চাষে আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় এখন পুকুর খননের দিকে জোর দিয়েছেন অনেকে। পাঙাশ, মনোসেক্স ও রুই, কাতলা, সিলভার কার্প জাতীয় মাছ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেক কৃষক। ফলে আবাদি জমিতে পুকুর খননের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
তবে জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবাধে চলছে পুকুর খননের কাজ। বিশেষ করে এলাকায় যারা অনেক জমির মালিক কিংবা বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী তারাই পুকুর খননের কাজ করছেন। যত্রতত্র পুকুর খননের কারণে কোনো কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রাম মাছ চাষের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। এ গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ এখন মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামটির আশেপাশের আবাদি জমি পুকুরে পরিণত করা হয়েছে।
ষোলটাকা গ্রামের কয়েকজন চাষি বলেন, ‘ইচ্ছেমতো পুকুর খননের কারণে বর্ষাকালে গ্রামের মধ্যে হাঁটু পানি জমে থাকে। বিশেষ করে ষোলটাকা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে দক্ষিণপাড়ার রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলার আবাদি জমির প্রায় সবই দুই ফসলি ও তিন ফসলি। ৭১৬.০৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলার ৭০-৮০ শতাংশ মানুষের আয়ের উৎস কৃষি। স্বাধীনতার সূতিকাগার মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুর জেলা তিনটি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মোটজমি ৬০ হাজার ১৮৩ হেক্টর এবং নিট ফসলি জমি ৬০ হাজার ২৪ হেক্টর। এক ফসলি জমি ৩ হাজার ১৫৩ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৩০ হাজার ৯১৩ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২৫,৮৩৮ হেক্টর, তিনের অধিক ৩২০ হেক্টর। মোট ফসলি জমি ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৭২ হেক্টর। উর্বর ও সমতল এলাকা হওয়ায় এখানে সব ধরনের ফসল আবাদ হয়।’
সদর উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের মাঠে আসকার আলী নামের এক ব্যক্তি ধান আবাদের ২ বিঘা জমিতে পুকুর কেটেছেন। পুকুর খনন করতে সরকারী সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়নি বলে জানান তিনি।
বাড়িবাকা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ির পাশের একটি উঁচু ভিটা কেটে গভীর গর্তের পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে বর্ষাকালে আশপাশের জমি ও গাছপালা পুকুরে বিলীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি আব্দুর রাজ্জাক।
অনুমতি ছাড়া তিন ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিষয়টি আনলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, ‘যারা পুকুর খনন করছেন তাদের কাউকেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’