ইজিবাইকের দখলে চুয়াডাঙ্গার সড়ক, দুর্ভোগে শহরবাসী

  • অনিক চক্রবর্তী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রয়োজনের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করে চুয়াডাঙ্গা শহরে/ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রয়োজনের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করে চুয়াডাঙ্গা শহরে/ছবি: বার্তা২৪.কম

চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কগুলো দখল করে আছে ইজিবাইক। এতে তীব্র যানজটের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শহরবাসী। একইসঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে বেশ কয়েকবার পৌরসভা মেয়র নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মুক্তি মেলেনি ভোগান্তি থেকে।

ভোগান্তিতে অফিস-স্কুলগামী মানুষ

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে অফিস টাইমে এবং বিকেলে অফিস শেষ হওয়ার সময় ইজিবাইকের জট লাগে প্রধান সড়কগুলোতে। বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ইজিবাইক চলাচল করছে। এসব ইজিবাইকগুলোর সংখ্যা হবে প্রায় চার হাজারের মতো। অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইজিবাইক চালকদের কারণেই সড়কে যানজট হচ্ছে। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞাপন
বিকেল থেকেই এভাবে প্রধান সড়কে যানজট লেগে থাকে

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা বলছে শহরে ইজিবাইকের যানজট কমাতে পৌরসভা থেকে লাইসেন্সের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। শহরের ভিতর যে ইজিবাইকগুলো দেখা যায় তার অধিকাংশই অন্য উপজেলা থেকে এসে শহরে ভাড়া খাটে। যার কারণে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়। নতুনভাবে এই সমস্য সমাধানে পৌরসভা থেকে চার উপজেলার ইজিবাইকের রংয়ের ভিন্নতা অনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে অন্য উপজেলার ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। পৌরসভার হিসাব অনুয়ায়ী শহরে ইজিবাইকের সংখ্যা এক হাজারের মতো। ইজিবাইক যানজট সমস্যা এড়াতে চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল সড়কে একমুখী সড়ক চালু করলেও তা কিছুদিন চললেও এখন আর তা মানেন না কেউ। ফলে ইজিবাইকের যানজট সমস্যা রয়েই গেছে।

নগরীর ছোট-বড় সব রাস্তায় যানজট লেগে থাকে

শহরের প্রাণকেন্দ্র বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বর, কোর্ট চত্বর এলাকা, একাডেমি বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট রোড, হাসপাতাল সড়ক, রেলওয়ে স্টেশনসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইকের যানজট দেখা যায়। যানজট নিরসনে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে তারাও ক্লান্ত হয়ে পড়ে অনেক সময়।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গা ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রেমা সরকার বলেন, ঝিনাইদহ বাসস্টান্ড থেকে তার স্কুলে আসতে সময় লাগে দশ মিনিট। কিন্তু ইজিবাইকের যানজটে পথে রিকসায় বসে থাকতে হয় ৩০ মিনিট।

অফিস-স্কুলগামী মানুষের ভোগান্তি

মিনিবাস চালক মতিয়ার রহমান বলেন, শহরের তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হতে অনেক সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ইজিবাইকের যানজটে অল্প এইটুকু রাস্তায় শহীদ হাসান চত্বর থেকে বাসস্ট্যান্ডে আসতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা।

কাপড় দোকানি শফি উদ্দিন জানান, ইজিবাইকগুলো দিন দিন সড়কে বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করছে। চলতি পথে হঠাৎ করেই রাস্তার পাশে সিগনাল ছাড়াই দাঁড়িয়ে পড়ে এসব ইজিবাইক। অদক্ষ চালকের কারণে ঘটছে বড় বড় দুর্ঘটনা। এসব ইজিবাইকের যানজট কমাতে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিশ্চুপ বসে আছে।

ট্রাফিক সিগন্যালও মানেন না এসব ইজিবাইক চালক

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চুয়াডাঙ্গা জেলার সাধারণ সম্পাদক হোসেন জাকির জানান, অদক্ষ চালকের কারণে ইজিবাইকের দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। দিন দিন ইজিবাইকের সংখ্যা বাড়ার ফলে যানজট কমানো এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক ইজিবাইক চালালে দুর্ঘটনা কম হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ইজিবাইকের যানযটের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইজিবাইকের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার উপজেলায় ইজিবাইকগুলোর ভিন্ন রঙের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাইওয়ে কোনো সড়কে ইজিবাইক চলতে পারবে না।