বাবার কারাগারে ছেলের মৃত্যু!
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আগের স্ত্রীর দুই ছেলেকে মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘরের ভেতর বন্দী করে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে হেমায়েত হোসেন সুমন নামে তার এক ছেলে মারা যাওয়ার পর ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে। জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমনের ছোট ভাই সাফায়েত হোসেন রাজুর দাবি, তাদের মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্যই দুই ভাইকে পাগল বলা হচ্ছে।
বড় ছেলে সুমন মারা যাবার পরেই বাবা হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। তবে বাবার দেখানো কাগজপত্রের বরাত দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশের উপপরিদর্শকও (এসআই) বলছেন, সন্তান দু’টি মানসিক রোগী। তারা অন্য সন্তানকে আর বন্দী না রাখার পরামর্শ দিয়েই মৃতের মরদেহ নিয়ে বিদায় হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সুমন ও রাজুর বাবা হাবিবুল্লাহ এ পর্যন্ত বিয়ে করেছেন চারটি। তিনি কবি নজরুল কলেজের ক্যাশিয়ার ছিলেন। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকা দুই ভাই তার প্রথম স্ত্রীর ঘরের ছেলে। তাদের মা মারা গেলে তাদের খালাকে বিয়ে করে হাবিবুল্লাহ। ক’দিন পর সে স্ত্রীও মারা যান। এরপর তিনি আরও দু’টি বিয়ে করে। অভিযোগ উঠেছে, প্রথম স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে দুই ভাইকে বঞ্চিত রাখতেই চতুর্থ স্ত্রীর সঙ্গে বুদ্ধি করে দুই সন্তানকে বন্দী করে রেখেছিলেন।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, দুই ভাইকে দীর্ঘদিন ধরে পাগল আখ্যা দিয়ে তালাবদ্ধ রুমে বন্দী করে রাখা হতো। অথচ ছোটবেলা থেকে তারা দুই ভাই স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতেন। দীর্ঘদিন আটকে রাখার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাতে বড় ছেলে সুমন মারা যান। এ সময় আরেক ছেলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে এবং ঘরে তালাবদ্ধ থাকা রাজুকেও মুক্ত করে।
উদ্ধারকৃত ছোট ছেলে রাজু অভিযোগ করে বলেন, ‘নোয়াখালী জেলার রামনগরের কেএমসি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মা মোহসেনা বেগম মারা যান। এরপর তাকে ফতুল্লায় নিয়ে আসে বাবা হাবিবুল্লাহ। কিছুদিন পর ছোট খালা কহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন তার বাবা। তিনিও মারা যান কয়েক মাসের মধ্যে। পরে আরেকজনকে বিয়ে করলেও তা বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে হনুফা বেগমকে বিয়ে করেন বাবা হাবিবুল্লাহ। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে তার বড় ভাই সুমন ও তাকে নির্যাতন করা শুরু হয়। এর পর তাদেরকে আলাদাভাবে দুটি রুমে গত এক বছর ধরে তালাবদ্ধ করে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রায়ই লাঠি দিয়ে মারধর করতো বাবা ও সৎ মা। মায়ের জমি থেকে বঞ্চিত রাখতেই আমাদের দুই ভাইকে পাগল আখ্যা দিয়ে আটকে রাখেন তারা।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিবুল্লাহ জানান, তার দুই ছেলে মানসিক রোগী। বড় ছেলে অসুস্থ হয়েই মারা গেছে। তিনি ছেলেদের ঘরে বন্দী রেখে চিকিৎসা করাতেন বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে ফতুল্লা মডেল থানার উপপরির্দশক ফজলুল হক জানান, নিহতের শরীরের পেছনে পচন ধরেছে। তবে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। অপর ছেলে রাজুকে উদ্ধার করা হয়েছে।