মৌলভীবাজারে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট
শ্রীমঙ্গল ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান চালক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মৌলভীবাজার জেলাব্যাপী সর্বস্তরের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য জেলাব্যাপী সর্বস্তরের পরিবহন ধর্মঘট পালন করবে তারা। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত জেলা সদরসহ সবকটি উপজেলায় দফায় দফায় মাইকিং করে এ কর্মবিরতি পালনের ডাক দেয়া হয়।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, গত সোমবার মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড-ভ্যান চালক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেন। এবং শ্রীমঙ্গল থানায় তাদের দেয়া লিখিত অভিযোগ আমলে নেয়ার দাবি জানান। কিন্তু বেধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপারের কাছে গত ২০ জানুয়ারি জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের প্যাডে প্রদত্ত পত্রে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সভাপতি পাবেল আহমেদ, সদস্য সচিব আজাদুর রহমান অদুদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেক আহমদ স্বাক্ষর করেন।
গত ১ জানুয়ারি প্রতিপক্ষ একটি সংগঠনের ড্রাইভার খায়রুজ্জামান কামালের নেতৃত্বে তার ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী মিলে শ্রীমঙ্গলস্থ ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর চালায়। এতে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন হয়।
ঘটনায় পর দিন সংগঠনের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মানিক বাদী হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও তা নথিভুক্ত করা হয়নি এবং আসামিও গ্রেফতার হয়নি।
জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব আজাদুর রহমান অদুদ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে বলেন, প্রশাসন আমাদের কোনো দাবি মানেনি। আমরা অপেক্ষা করে সারা জেলায় ধর্মঘটের মাইকিং বের করেছি। দাবি আদায় করতে ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো রাস্তা নেই।
আমাদের দাবি ছিল, শ্রীমঙ্গল থানায় আমাদের অভিযোগ যাতে আমলে নেওয়া হয়। আর আসামিদের গ্রেফতার করার। এর কোনোটাই মানা হয়নি।
তিনি বলেন, বাস, লাইটেস, জিপ, কার, সিএনজি, ট্রাক, ট্যাংলরীসহ সর্বস্তরের পরিবহন বন্ধ থাকবে। পরিবহন বলতে যা বুঝায় সবই বন্ধ থাকবে। সারা জেলায় ধর্মঘট ডাকের মাইকিং করা হয়েছে।
বুধবার দুপুর ১২টার পর থেকে মাইকিং বের হয় শ্রীমঙ্গলে। দুইটার পর বের হয় মৌলভীবাজার জেলা শহর, শেরপুর, রাজনগর, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায়।
ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি-চট্ট-২৪০৩) শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান জানান, বাস, মিনিবাস, লাইটেস, কার, জীপ (১২২৩), সিএনজি অটোরিক্সা (২৩৫৯) এবং ট্রাক, ট্যাংলরী, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান (২৪০৩) এ তিনটি সংগঠন ঐক্য পরিষদের নামে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয়।
তিনি বলেন, ড্রাইভার কামাল বিগত কিছুদিন ধরে সংগঠনের বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছিল। সে বিএনপি উপজেলা কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদে রাজনীতি করছে। ইদানিং বিএনপির রং পাল্টিয়ে সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ ড্রাইভারদের কাছে চাঁদা চায়। তার এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। সে ও তারা সহযোগীরা শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসে হামলা ও ভাঙচুর করেছে।
জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমেদ জানান, কামাল নামের কেউ শ্রমিকলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। এমনকি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে শ্রমিকলীগের কেউ হামলা চালায়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সভাপতি খায়রুজামান কামাল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ঘটনা সাজিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। হামলার ঘটনার দিনের শ্রমিক ইউনিয়ন অফিসের আশপাশের দোকানপাটের ভিডিও ফুটেজ দেখলেই পরিষ্কার হবে কারা এই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, ধর্মঘট ডাক দেয়ার বিষয়ে জেলা পরিবহন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছি। দেখি তারা কী চায়। কী অভিযোগ। কী বিষয়।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, ওরা কর্মবিরতি করবে করুক। তারা কীসের জন্য করছে, কেন করবে, কী বিষয়, কার ওপর কমপ্লেইন- এটা তো আমরা এখনো জানি না।
শ্রমিক পরিবহনের অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে মামলা নেওয়া হয়নি। কারণ হলো তারা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙচুর করেছে।