আইসিজের আদেশে খুশি রোহিঙ্গারা
মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। এ আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
আদেশের দ্রুত বাস্তবায়ন চান রোহিঙ্গা নেতারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও জোড়ালোভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের তদন্ত কমিটি প্রমাণ না পাওয়ার কথা বললেও ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের কাছে জোনোসাইডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যা ইতিমধ্যে আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। এ আদেশের পাশাপাশি নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার আশা করছেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। এরকম একটি বিজয়ের আশায় ছিল বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার যথেষ্ট প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনারা যুগ যুগ ধরে আমাদের ওপর জেনোসাইড চালিয়ে আসছিল। যা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে বড় আকারে জনসম্মুখে এসেছে। আদালতের আদেশের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। পাশাপাশি নিজ দেশে ফিরতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করছি।
রোহিঙ্গা নেতা আশহাব উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গণহত্যার কোন প্রমাণ মেলেনি বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে মিয়ানমারের একটি তদন্ত প্যানেল, তা সর্ম্পূণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ১৪০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে আমাদের মা-বোনদের ওপর পরিচালিত নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার কোন চিত্র উল্লেখ করা হয়নি। এ প্যানেল সরকারের কথামতো প্রতিবেদন দিয়েছিল।
আশহাব উল্লাহ আরও বলেন, মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মিয়ানমার জেনোসাইডের ঘটনা অনেক আগে থেকে ঘটিয়ে আসছিল। মিয়ানমার সরকার জেনোসাইডের ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করছে। যাতে করে সেনাবাহিনীকে রক্ষা করা যায়। এমনকি সরকার সেদেশে শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আইন তৈরি করেছে। আজকে আইসিজের দেওয়া আদেশ তাদের চক্রান্তে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। যার জন্য খুশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।
রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত ও নানান নির্যাতন করার পরও থেমে নেই মিয়ানমারের অত্যাচার। মিয়ানমারে অবস্থানরত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গার ওপর চলছে গণহত্যার উদ্দেশ্যে নির্যাতন। আইসিজের আদেশে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। আশা করছি সম্মান, নাগরিকত্ব ও মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ আজ।
গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার যে ধর্ষণ, অত্যাচার-নিপীড়ন চালায় তার উদ্দেশ্য ছিল ‘গণহত্যা’ বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানি করে গাম্বিয়া। আর ১১ ডিসেম্বর শুনানি করে মিয়ানমার।