বিনামূল্যের সরকারি ঘরের নামে নেওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা

  • অভিজিৎ ঘোষ,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নির্মাণাধীন বিনামূল্যের সরকারি ঘর/ ছবি: বার্তা২৪.কম

নির্মাণাধীন বিনামূল্যের সরকারি ঘর/ ছবি: বার্তা২৪.কম

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও পার্শ্ববর্তী গোপালপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিনামূল্যের সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। উপজেলার ভরুয়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মালেক ও তার ভাই কালু শেখ ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করছেন গ্রহীতাদের কাছ থেকে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সরকারিভাবে বরাদ্দ কোনো ঘর ব্যক্তিগতভাবে আসার সুযোগ নেই।

জানা গেছে,  এক আত্মীয় সচিবালয়ে চাকুরি করার সুবাদে বিনামূল্যের সরকারি ঘর এসেছে বলে লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন আব্দুল মালেক। এসব ঘর প্রতি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে লোকজনকে ঘর তৈরির সরঞ্জাম দিচ্ছেন তিনি।

পার্শ্ববর্তী গোপালপুর উপজেলাসহ ভূঞাপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের ৪ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে মালেক ও তার বড় ভাই কালু শেখ তাদের লোকজন। এতে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। দরিদ্র এসব মানুষও ঘর পাওয়ার আশায় মালেকের হাতে তুলে দেন নগদ ৫০ হাজার টাকা। টাকা নেয়ার পর গোপালপুর উপজেলার কাহেতা এলাকা থেকে ঘরের জন্য টিন, কাঠ, খুঁটি, সিমেন্ট ও ইট দেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে নলীন বাজার সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি বাড়িতে টিনের আধাপাকা ১৬ হাতের একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মেঝে পাকাসহ টিনের চাল লাগানো শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে ঘরের বেড়া, দরজা ও জানালা লাগানোর কাজ।

এছাড়া উপজেলার বলরামপুর, অজুর্না, তারাই, ভরুয়া, বল্লববাড়ি, গোপালপুর উপজেলার নলীন, হেমনগর কাহেতা এলাকার ৪ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে তাদের ঘর তৈরির মালামাল দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভরুয়া গ্রামের পাসান আলী, কাদেরসহ অনেকেই জানান, মালেক এক সময় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতো। পরে কিভাবে সরকারিভাবে বিনামুল্যের ঘর এনে কাজ করছে জানি না। ঘর প্রতি মানুষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। মানুষজনও ঘর পাওয়ার আশায় টাকা দিচ্ছে। এপর্যন্ত শতাধিক মানুষকে ঘর দিয়েছে কিন্তু এখনও ঘরের কাজ শেষ হয়নি।

নলীন বাজার সংলগ্ন ঘর পাওয়া আজাহার ও তার স্ত্রী বলেন, শুনেছি সরকারিভাবে ঘর এসেছে গরীব মানুষকে দেয়ার জন্য। কিন্তু মালেক নামের ভরুয়া এলাকার একজন ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে ঘর নেয়ার জন্য। ঘর আনতে নাকি টাকা খরচ হয়, তাই টাকা নিয়েছে।

নলীন গ্রামের তারা মিয়া নামের আরেকজন বলেন, টাকা ছাড়া কেউ ঘর দেয় না। টাকা দিয়ে ঘর তৈরির জন্য মালামাল এনে নিজের মত করে ঘর তৈরি করেছি। এখনও কাজ শেষ হয়নি।

কাঠ বিক্রেতা পাসান, জামাল, সমেশ শাহার আলী জানান, শুনেছি সরকারিভাবে ৪ শতাধিক ঘর নির্মাণ করা হবে। এই জন্য মালেক কাঠ নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে।

নলীন বাজারের মুদি দোকানদার আমিনুর বলেন, সরকারিভাবে আসা ঘরের জন্য মালেককে ৫টি ঘরের জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘর দেওয়ার কোনো খবর নেই।

এ বিষয়ে উপজেলার ভরুয়া গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেন সাহেবের মাধ্যমে ৫০টি বিনামূল্যের ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। এই ঘরগুলো মানুষের মাঝে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের মাধ্যমে এই ঘরগুলো দেয়া হচ্ছে।

উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা জানান, ঘরের জন্য টাকা নেয়ার বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু সরকারি ঘর কিভাবে এনেছে সেটা জানা নেই। সরকারি দফতরগুলোতে খোঁজখবর নেয়ার পরও কোন হদিস পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. নাসরীন পারভীন বার্তা২৪.কম-কে জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে আসা বিনামূল্যের ঘর এবং ঘরের জন্য টাকা আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।