হত্যা মামলার অভিযুক্তকে অব্যাহতি কেন, আদালতে ব্যাখ্যা পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের
নাটোরে বেসরকারি হাসপাতালের সেবিকা হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় পুলিশ কর্মকর্তাদের এবং তা মঞ্জুর করায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন আদালত। সেই মোতাবেক তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের নিজ বক্তব্য পেশ করেছেন।
ব্যাখ্যায় ১৬৪ ধারায় দেওয়া আসামির জবানবন্দী তদন্তে অভিযুক্ত হত্যাকারীকে কেন অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় তা জানানো হয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বরাবর জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ রানা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি(পিপি) অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সৈকত হাসান।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং তা মঞ্জুর করায় অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এর ব্যাখ্যা চান জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান সরদার। সোমবার নির্ধারিত দিনে ব্যাখ্যাটি আদালতে দাখিল করা হয়।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে শহরের চকরামপুরের জেনারেল হাসপাতালের পঞ্চম তলায় ছুরিকাঘাতে খুন হন হাসপাতালের সেবিকা ও নলডাঙ্গা উপজেলার নশরতপুর গ্রামের লাল মোহম্মদের মেয়ে মিতা খাতুন। তিনি সেবিকার পাশাপাশি ওই হাসপাতালের অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর নিহত মিতার ভাই শোয়েব হোসেন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ওই হাসপাতালের সুইপার সাগর জমাদারকে আটক করে।
আটক সাগর হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সাগর জানান, মিতাকে হত্যা করেছেন হাসপাতালের মালিক আজিজ মোল্লা। তার সঙ্গে মিতার অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
হত্যার বর্ণনায় সাগর বলেন, ঘটনার দিন হাসপাতালের ৫ম তলায় মিতার সঙ্গে আজিজ মোল্লার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সার্জিকাল ছুরি দিয়ে আজিজ মিতার গলায় আঘাত করে। এরপর আজিজের নির্দেশে মিতার গলায় দ্বিতীয়বার আঘাত করে সাগর। মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা দুইজনেই পালিয়ে যান।
এই জবানবন্দির ভিত্তিতেই স্বত্বাধিকারী আজিজকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
কিন্তু ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সাগরকে মূল আসামি করে আজিজকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিচারক মামুনুর রশীদ আজিজকে অব্যাহতি দিয়ে মামলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এলে সাগরের আইনজীবী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির মূল অভিযুক্তকে অব্যাহতি দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে জামিন আবেদন করলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আজিজ মোল্লাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট সুপারিশ ও অব্যাহতির ব্যাখ্যা চান বিচারক আবদুর রহমান সরদার।
কী কারণে অভিযুক্ত আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হলো জানতে চাইলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ সৈকত হাসান বলেন, হাসপাতাল মালিক আজিজ মোল্লাকে ফাঁসানোর জন্য জবানবন্দিতে তাকে মূল হত্যাকারী বলেন সাগর জমাদার। তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। জবানবন্দিতে সাগর মিতার গলায় দুজনের আঘাত দেওয়ার কথা জানালেও মরদেহের ময়না তদন্তের পর দেখে গেছে গলায় একটি আঘাত রয়েছে। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় হত্যাকাণ্ডের সময় পাঁচ তলায় শুধু সাগর উপস্থিত ছিল। আজিজ মোল্লা ঘটনাস্থলে পরে যান। জবানবন্দির সঙ্গে সিসিটিভির ফুটেজে মিল না পাওয়ায় আজিজের জন্য অব্যাহতি চাওয়া হয়।
১৬৪ ধারার জবানবন্দির আলোকে তদন্ত প্রতিবেদন না হওয়ার পরও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে কর্তৃক অভিযোগপত্র গ্রহণ ও অব্যাহতির সুপারিশ কেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত কর্তৃক প্রশ্নবিদ্ধ হলো সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগপত্র বা অভিযুক্ত আজিজ মোল্লার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে মামলার বাদীর কোন আপত্তি ছিল না। আপত্তি থাকলে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিতেন। নিয়মানুযায়ী পুনঃতদন্তের সুযোগ না থাকায় বিচারক আজিজ মোল্লাকে অব্যাহতির সুপারিশ করেন।
সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, পুলিশের দেখা ব্যাখ্যা তিনি পেয়েছেন যা আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে। তবে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার ব্যাখ্যা আদালতে পাঠাবেন।