এসেছিলেন বিয়ে খেতে, ফিরলেন লাশ হয়ে

  • ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মৌলভীবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিহতের স্বজনদের আহাজারি, ছবি: সংগৃহীত

নিহতের স্বজনদের আহাজারি, ছবি: সংগৃহীত

কিছুদিন আগেই আত্মীয়ের বিয়েতে হবিগঞ্জ থেকে সপরিবারে মৌলভীবাজারে এসেছিলেন দিপা রায় (৩৫)। ২২ জানুয়ারি বিয়ে শেষ হলেও সোমবার ছিল বিয়ের বৌভাত। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের সাথেই হবিগঞ্জে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না দিপা রায়ের। ভয়াবহ আগুন মা-মেয়ের জীবন কেড়ে নেবে এটা হয়তো ভাবেননি দিপা রায়ের স্বামী সজল রায় ও তার ছেলে সন্তান।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে পিংকি স্টোরের গ্যাসের রাইজার থেকে লাগা আগুনে পুড়ে অন্যান্য স্বজনদের সাথে মারা যান মা-মেয়ে দুজনেই। পিংকি স্টোর নামের যেই দোকানটি থেকে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত হয় সেই দোকানের ওপরের বাসাতেই আত্মীয়দের সাথে তার এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন দিপা রায়।

বিজ্ঞাপন

আগুন লাগার পর বাসার অন্যান্য সদস্যদের মতো দিপা রায়ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওই বাসায় আটকা পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে ছেলে বাসার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারলেও ছোট মেয়ে বৈশাখীকে নিয়ে বের হতে পারেননি মা দিপা রায়। ফলে অন্য ৩ জনের সাথে মারা যান তারাও।

ভয়াবহ আগুন থেকে বেঁচে ফেরা সুভাষ রায়ের স্ত্রী জয়ন্তি রায়ের দুচোখ এখন অন্ধকার। অগ্নিকাণ্ডে হারিয়েছেন স্বামী সুভাষ রায় ও মেয়ে পিয়া রায়কে। বড় মেয়ে পিংকি শ্বশুর বাড়িতে থাকায় বেঁচে যান।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

জয়ন্তি রায় বলেন, 'আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, চা জ্বাল দেয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠি। উঠেই দেখি আমার বাসায় থাকা এক আত্মীয় আগুন বলে চিৎকার করছেন। পরে আমি চিৎকার করে সবাইকে সজাগ করি। বাসায় আমরা নয় জন ছিলাম। পিংকির চাচা মনা রায়, দিপার ছেলে ও দোকানের কর্মচারী বাসার পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে। বাকিরা সবাই বাসায় আটকা পড়েন।'

প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন, 'বিয়ে উপলক্ষে পিংকির মামা, মামী ও ভাই বোনরা এসেছিল। এর মধ্যে মামা সজল রায়, মামী দিপা ও তার মেয়ে বৈশাখী মারা গেছেন। বর্তমানে পিংকি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে পুরো পরিবার স্তব্ধ।'

প্রত্যক্ষদর্শী মো. আমির বলেন, 'আমি দোকানে এসে শুনি আগুন লেগেছে। এই দোকানে আতশবাজি ছিল। যখন আগুন লাগে তখনই আতশবাজি ফুটতে শুরু করে। পরে বিকট শব্দে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়'।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী শেখ রুমেল আহমেদ বলেন, 'পিডিবি ও জালালাবাদ গ্যাস এ ঘটনায় চরম অবহেলা করেছে। আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পরও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়নি। এমনকি পৌর মেয়র, ব্যবসায়ীরা বারবার অভিযোগ করার পরও কোনো সাড়াই দেয়নি।'

সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, 'সুভাষ রায়ের ভাই ও বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে লেখা চিঠি দিয়ে তাদেরকে দুই হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিলেন। এখন একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আবারো এই পরিবারের ৫জন মারা গেল।'

আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে অগ্নিকাণ্ডে দুটি তদন্ত কমিটি

ফায়ার সার্ভিস মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, 'আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে জানাবো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি দোকানের ভেতরেই ছিল গ্যাস লাইনের রাইজার। এখান থেকেই আগুনের উৎপত্তি হয়েছে।'

এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা। মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজারের এম সাইফুর রহমান সড়কের পাশের পিংকি সু স্টোর নামে একটি দোকানে আগুন লেগে শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। 

মৃতরা হলেন-পিংকি সু স্টোরের মালিক সুভাষ রায় (৬৫), তার মেয়ে প্রিয়া রায় (১৯), সুভাষ রায়ের ভাইয়ের স্ত্রী দীপ্তি রায় (৪৮), সুভাষ রায়ের শ্যালকের স্ত্রী দিপা রায় (৩৫) ও দিপা রায়ের মেয়ে বৈশাখী রায় (৩)।

স্থানীয়রা জানান, পিংকি স্টোরের মালিক স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ওই দোকানের পেছনে থাকতেন। আগুন ধরার সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরেই ছিলেন।