তোফাজ্জল পাগলার সঙ্গী একতারা ও লালনের গান

  • মাহমুদুল হাসান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,গাজীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তোফাজ্জল পাগলা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

তোফাজ্জল পাগলা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

‘আগে কাপড়, শাড়ি বুনাইতাম। আশির দশকে রেল লাইনের রাস্তার কাজ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকার কাঁচপুরের এক লোক পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নিছে। চাকরি আর দিল না। আমার টাকা-পয়সা সব লইয়া ভাগছে। তখন স্ত্রী ও চার সন্তানরে লইয়া খুব বিপদে পড়ি। পরে টাঙ্গাইলে রিকশা চালানো ধরি। পাশাপাশি লালন সাঁইজির গান শুনে শুনে মুখস্থ করতে থাকলাম। ওস্তাদের কাছে একতারা বাজানো শিখলাম। গান বাজনা করি, রিকশা চালাই। এভাবেই কাটে আট বছর। এরপর রিকশা চালানো বাদ দিয়া একতারা লইয়া আসরে, স্টেশনে, রাস্তা-ঘাটে গান বাজনা শুরু করি।’

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে জয়দেবপুর জংশনের একটি পুরাতন কাপড়ের দোকানে বসে স্মৃতিচারণ করছিলেন তোফাজ্জল পাগলা।

বিজ্ঞাপন

তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থানার নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া গ্রামে। পরিবারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের ফেলে গান-বাজনাই এই ভবঘুরের একমাত্র সঙ্গী।

কুষ্টিয়া, রাজশাহী, বগুড়া, জামালপুর, ময়মনসিংহ, জয়দেবপুরসহ দেশের সব প্রান্তেই ঘুরে বেড়ান ষাটোর্ধ এই ব্যক্তি। সবচেয়ে বেশি সময় কাটান জয়দেবপুর জংশনে। এখানে তাকে সবাই তোফাজ্জল পাগলা নামেই চেনে। সারাদিন নানা প্রান্ত ঘুরে রাত কাটান স্টেশনেই। লালন সাঁইজির রপ্ত করা কয়েকটি গানের সুর তুলেন নিজের একতারায়। মানুষ গানে মুগ্ধ হয়ে কিছু পয়সা-কড়ি দেয়। এতেই কোনো রকম চলছে তার জীবন।

বিজ্ঞাপন
তোফাজ্জল পাগলার সঙ্গী একতারাও লালনের গান / ছবি: বার্তা২৪.কম

তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৬ বছর আগে সংসার ছেড়ে একতারা হাতে লই। পড়াশোনা জানি না। শুনে শুনে লালনের কয়েকটি গান মুখস্থ করছি। গানে তেমন পারদর্শী না। তবুও বিভিন্ন আসরে, রাস্তা-ঘাটে সাঁইজির গান গাই, একতারা বাজাই। আমার মনমত যা পারি গাই। এতে কেউ কেউ মুগ্ধ হয়ে ১০০-২০০ টাকা দেয়। এতেই নিজের খরচ চালাই। আর না খেয়ে থাকলেও কারও কাছে হাত পাতি না। সাঁইজির কালাম ও গান শুনিয়েই মনে সুখ পাই।’

‘বিভিন্ন এলাকায় ভালই নাম ফুটছে। পাগল বলে ডাকলে, ভালবাসা পেলে মানুষকে সঙ্গ দেই। একতারা বাজিয়ে গান শুনাই। আমার গুরু টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার আবুল হোসেন। তিনি মারা গেছেন অনেক আগে। এখন তার দায়িত্ব আমিই পালন করছি।’

‘অনেক দুঃখ-কষ্টের জীবন আমার। পরিবারের সঙ্গে আর থাকা হয় না। এই গানের জগত নিয়েই থাকি। অন্য কোনো বিদ্যা-বুদ্ধি জানি না। সাধক, জ্ঞানীদের গান গাই। ভালো গান গাওয়ার চেষ্টা করি। সাধু, পীর, ফকির ও পাগলদের সঙ্গে সময় কাটাই। একবার তাদের নিয়ে গরু জবাই করে বাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠান করেছি। এসব করতে অনেক টাকা-পয়সার দরকার। এখন নিজেই চলতে পারি না।’

সরকার যেন বাঙালির ঐতিহ্যকে লালন করে, সকল লালন ভক্তদের রক্ষা করে -এমন আকুতি তোফাজ্জল পাগলার।