কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল
কলুর ঘাড়ে ঘানি। চোখের ওপর মোটা কাপড়ের পর্দা দেওয়া। চলছে কলুর বলদ। কাঠের তৈরি ঘানিটা ঘুরছে, আর সরিষা পিষে তা থেকে মাটির পাত্রে জমা হচ্ছে সরিষার তেল। খাঁটি সরিষার তেলের ঝাঁঝালো গন্ধে চোখে পানি এসে যায়। বলছিলাম কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার শেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দাতে মিজানুর রহমানের কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল তৈরির কথা।
কয়েক বছর আগেও ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল দিয়েই মিটতো এই এলাকার অনেক পরিবারের তেলের চাহিদা। বর্তমানে এই ঘানি প্রত্যন্ত গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায়না। ভেজালের এই যুগে শতভাগ খাঁটি তেল খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
মিজানুর রহমান কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার শেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। একসময় সংসারের সচ্ছলতা আনতে পাড়ি জমান ওমানে। বিদেশ থাকাকালীন সড়ক দুর্ঘটনায় তার দুই পা ভেঙে যায়। এরপর দেশে ফিরে এসে সামান্য টাকা আর হালের দুইটি বলদ দিয়ে শুরু করেন পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ঘানিতে সরিয়া পিষে তেল তৈরি করে বিক্রির কাজ। নিজের সংসারের হাল ফেরানো আর মানুষকে ভালো খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি।
মিজানুর রহমানের কাঠের ঘানিতে তৈরি হওয়া খাঁটি সরিষার তেলের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। শুধু এলাকার মানুষই নয়, জেলা শহর থেকেও আগ্রহী ক্রেতারা এসে তেল নিয়ে যায় এখান থেকে।
আব্দুল্লাহ শাহ নামে এক ক্রেতা জানান, একসময়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে বিক্রি হতো। এই তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন কলু সম্প্রদায়ের লোকেরা। তবে এটি এখন দুর্লভ। এখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রেই করা হয় তেল ভাঙানোর কাজ।
মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশ থেকে ফিরে বাড়িতেই হালের বলদ দিয়ে শুরু করি পৈত্রিক ব্যবসা। ৫ কেজি সরিষা থেকে প্রায় আড়াই কেজি তেল তৈরি হয়। আমরা এই তেল এখান থেকেই ১২০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি করে থাকি। অনেকেই এই ঘানি দেখতে আসে এবং তেল কিনে নিয়ে যায়।