যে সড়কে যানজট নিত্যদিনের

  • সাবিত আল হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নারায়ণগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে যানজট/ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে যানজট/ছবি: বার্তা২৪.কম

তীব্র যানজট এখন নিত্য বিষয় হয়ে উঠেছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে। এক সময়ে শুধুমাত্র সড়কের পঞ্চবটি মোড়ে জ্যাম থাকলেও এখন তা বিস্তৃত হয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, এ সড়কে বেশ কিছু ব্যবসায়ী স্কেল বসিয়ে এবং যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসনের যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

এক সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করতে ব্যবহৃত হত এই সড়ক। বর্তমানে যেটি নারায়ণগঞ্জ-পাগলা-ঢাকা পুরাতন সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে পঞ্চবটি মোড় হয়ে মুন্সিগঞ্জ-ঢাকা যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরী, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল, মুক্তারপুরের অসংখ্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরির গাড়ি যাতায়াত করে এ সড়ক দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

এ সড়কে নিত্যদিনের চলাচলে প্রধান বাধা অসহনীয় যানজট। পঞ্চবটি মোড় থেকে শুরু হয়ে পাগলা পর্যন্ত তীব্র যানজটের কারণে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। কখনো কখনো এই যানজট ছাড়িয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা ও মুন্সিগঞ্জ সড়কের মুন্সিখোলা পর্যন্ত।

সরজমিনে দেখা যায়, পঞ্চবটি মোড়ের যানজটের মূল কারণ চৌরাস্তা। চারদিক থেকে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রাইভেট কার পঞ্চবটি মোড়ে এসে মিলিত হয়। ফলে গাড়ির অত্যধিক চাপে কমে আসে যানবাহনের গতি। এখানকার যানজটের আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিং। পুরো মোড়কে ঘিরেই বাস, সিএনজি ও অটো রিকশা স্ট্যান্ড। তাছাড়া অবৈধ দোকানপাটেরও অভাব নেই আশেপাশে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া পঞ্চবটির মোড়ের অদূরেই রয়েছে যমুনা ও মেঘনা অয়েল ডিপো। এ দু’টি ডিপোর সামনে রাস্তায় অসংখ্য জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে। পথে পথে অসংখ্য ওজন স্কেল রয়েছে, যাতে পণ্য মাপতে আসা গাড়ির কারণে যানজট তৈরি করে। একইভাবে দাপা বালুরঘাট এলাকায় রাস্তার দুপাশে পাথর, ইট, বালির দোকান। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকে লোড-আনলোডের অপেক্ষমাণ ট্রাক। আর এতে করে রাস্তা এতটাই সরু হয় যে পাশাপাশি দুটো বাস অনায়াসে চলতে পারে না।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে যানজট/ছবি: বার্তা২৪.কম

সড়কের পাশেই বুড়িগঙ্গা নদী থাকায় নদীপথে ইট, পাথর আর বালু এসব দোকানে আসে। এখানে ইট আর পাথর ভেঙে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ এসব ট্রাক যখন রাস্তায় নামে বা দিক পরিবর্তন করে, তখনই যানজটের সৃষ্টি হয়।

প্রতিদিন এমন যানজট থাকলেও প্রশাসন কালেভদ্রে ব্যবস্থা নেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। ভুক্তভোগীরা বলছেন, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ, অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ মাঝে মধ্যে হলেও বছর জুড়েই এসব রাস্তা দখল করে রাখে। এতে দুর্ভোগ বাড়ে অসংখ্য মানুষের, আর লাভবান হয় ক্ষমতাসীন দলের নাম ভেঙে খাওয়া গুটিকয়েক ব্যক্তিরা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহউদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, পুরো সড়ক জুড়ে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমরা তাদের বার বার ডেকে নিয়ে বিষয়গুলো সুরাহা করার তাগিদ দিলেও তারা অঙ্গীকার করে গিয়ে সেটি আর বাস্তবায়ন করে না। এক্ষেত্রে বাস, ট্রাক চালক থেকে শুরু করে তেল ডিপো, সিমেন্ট কারখানা, ইট বালু ব্যবসায়ী সকলেই অসহযোগিতা করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এই সড়কে ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর, সার্জেন্টসহ একাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছি। কিন্তু তবু কোনভাবেই স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া জুন মাস পর্যন্ত মামলা স্থগিত থাকার নির্দেশনা দেয়ায় অবৈধ পার্কিং এর বিরুদ্ধে মামলা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এই সড়কের যানজট সমাধানের জন্য সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।