সংস্কারের ধীরগতিতে সড়কে উড়ছে ধুলা, নাজেহাল জনজীবন

  • নাইমুর রহমান, ডিসট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংস্কারের ধীরগতিতে সড়কে উড়ছে ধুলা, ছবি: বার্তা২৪.কম

সংস্কারের ধীরগতিতে সড়কে উড়ছে ধুলা, ছবি: বার্তা২৪.কম

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নাটোর-পাবনা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী বনপাড়া বাজার জেলার প্রধান ‘বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পাথরসহ ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার হয় মহাসড়কের এই বাজার এলাকাটি।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এ প্রবেশদ্বারটির মাত্র ৫০০ মিটার সড়কের ধুলায় নাজেহাল বনপাড়াবাসী। খোদ বনপাড়া পৌরসভার সামনের সামান্য এ সড়কটুকু ‘কচ্ছপ গতিতে’ সংস্কারের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী, রাস্তার দুই পাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের যাত্রীরা।

বিজ্ঞাপন

ভোগান্তি আরও বেশি পোহাতে হচ্ছে সড়কের দু’পাশে বসবাসকারী মানুষদের। এই বেহাল অবস্থা দিন দিন বেড়ে চললেও আমলে নিচ্ছেন না ঠিকাদার। আর ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ সড়ক ও জনপথ বিভাগের। তবে সৃষ্ট ধুলায় বায়ুদূষণ থেকে পথচারী ও যাত্রীদের সাময়িক রেহাই দিতে পানি ছিটাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করছে পথচারীরা

বনপাড়া হাইওয়ে থানার তথ্য মতে, প্রতিদিন নাটোর-পাবনা মহাসড়কের বনপাড়া বাজার অতিক্রম করে প্রায় দুই লাখ হালকা, মাঝারি ও ভারী যানবাহন। একই সঙ্গে স্থানীয় চারটি কলেজসহ ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে এই পথে। এছাড়া বনপাড়া উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হওয়ায় সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বনপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ডিভাইডারের দু’পাশে কার্পেটিং উঠে তৈরি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দের। সেই খানাখন্দ ঢেকে রাখা হয়েছে নিম্নমানের ইট দিয়ে। ভারী যানবাহনের চাপে এসব ইট ভেঙে গুঁড়া হয়ে আবারও গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সেই গুঁড়া আবার বাতাসে মিশছে। নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। গর্তে যানবাহন আটকে গেলেই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। রাত কিংবা দিন নয়, সবসময় একই দুর্ভোগ।

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) জানায়, বনপাড়া বাজারের মধ্য দিয়ে যাওয়া নাটোর-পাবনা, ঢাকা-পাবনা, ঢাকা-কুষ্টিয়া ও উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের চাপে কয়েক বছর আগে সড়কটিতে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চার মাস আগে সওজ ওই অংশে ইট বিছিয়ে দেয়। টেন্ডার আহ্বানের পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের নাটোর অংশ সংস্কারের জন্য কাজ পায় খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ।

জানা গেছে, প্রায় ৩ মাস অতিক্রম হলেও বনপাড়া পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটুকুতে এখনো কাজ শুরু করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। তবে স্থানীয়দের দাবির মুখে সড়কের খানাখন্দে ইট ফেলেছে তারা।

সাময়িক রেহাই দিতে পানি ছিটাচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের মতো করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তদারকির অভাবে কাজের এমন ধীরগতি। তাদের স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

সড়ক সংলগ্ন দোকানি মিলন হোসেন বলেন, ‘এতটা গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কয়েক মাস ধরে শুধু ইট বিছানো হয়েছে। সংস্কারের লেশমাত্রও নেই। কিযে দুর্ভোগ, তা বর্ণনা করা কঠিন।’

কালিকাপুর এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুধু রাস্তার কারণে মারাত্মক বায়ু দূষণের শিকার বনপাড়াবাসী। এমন ধুলা আগে ছিল না। ধুলা থেকে রাতেও নিস্তার নাই।’

কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী সালামত আলী বলেন, ‘সপ্তাহে হাটের দিন রাস্তার পাশে সবজি-কাঁচামালের পসরা সাজিয়ে বসা যায় না। রাস্তায় গাড়ি চললেই ধুলা ছিটে এসে সবজির গায়ে পড়ে।’

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জুয়েল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পৌরসভার কাজ কিন্তু সকাল-বিকাল রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ধুলা দূর করা নয়। তবুও আমরা পৌরবাসীর স্বার্থে এটি করছি। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এই স্থানে এমন দুর্দশা মেনে নেওয়া কষ্টকর। সওজের উচিত কাজটি যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগাদা দেওয়া।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নয়েজ রহমান বলেন, ‘মহাসড়কটি পরিদর্শন করেছি। রড-সিমেন্ট দিয়ে রাস্তাটি ঢালাই করা হবে। কাজ দ্রুত শেষ হলে দুর্ভোগ কমে আসবে।’