ছুটির দিনে সাফারি পার্কে ২৫ হাজার দর্শনার্থী
সাপ্তাহিক ছুটিরে দিনে সপরিবার, বন্ধু-বান্ধবসহ দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখরিত ছিল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। নাগরিক ব্যস্ততা আর ইট-পাথরের জঞ্জাল ছেড়ে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে দর্শনার্থীরা ছুটে এসেছে শাল-গজারি বেষ্টিত এই পার্কে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী এসেছে সাফারি পার্কে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্যামিলি ডে ও পিকনিকের কারণে দর্শনার্থী ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক পার হলেই বিশাল মাঠ। সারি সারি ফুলগাছ। দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করেছে কোর সাফারি পার্কে। এখানে বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভেতর উন্মুক্ত বিচরণ করে। এসব প্রাণী দেখতে দর্শনার্থীদের পার্কের নির্ধারিত মিনিবাসে চড়ে যেতে হয়। বাসে উঠতে দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গেছে। চার ঘণ্টার বেশি অবস্থানকালে লাইনে কয়েক হাজার দর্শনার্থীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এই অংশে প্রবেশ ফি বড়দের ১০০ টাকা ও ছোটদের জন্য ৫০ টাকা।
পাঁচটি অংশে বিভক্ত এই সাফারি পার্কে রয়েছে কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পার্কের কোর সাফারি অংশে রয়েছে ১২টি এশিয়ান বাঘ। যার মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও ছয়টি মাদী। রয়েছে আফ্রিকান জাতের ১৬টি সিংহ। এর মধ্যে চারটি সাদা রঙের। প্রথম বারের মতো প্রায় দুই মাস আগে ভালুক বাচ্চা দিয়েছে।
থাইল্যান্ডের সাফারি পার্কের আদলে গড়ে তোলা এই পার্কে হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, বিস্ট ছাড়াও রয়েছে ময়ূর, ধনেশ, ক্রাউন ফিজেন্টসহ দেশি-বিদেশি হরেক রকম পাখি, প্রজাপতি কর্নার, কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র, মেরিন অ্যাকুরিয়াম, ইমু গার্ডেন, ময়ূর বা মেকাউ ওপেন ল্যান্ড, লেকজোন ও কুমির পার্ক। এসব দেখতে হলে প্রতি দর্শনার্থীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে ফি নেওয়া হচ্ছে।
পার্কের প্রবেশ ফি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ আর শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা। এছাড়া বিদেশিদের প্রবেশ ফি ৫ ইউএস ডলার বা ৪০০ টাকা। নাইন ডি মুভি কর্নারে বড়দের প্রবেশ ফি ১০০ ও ছোটদের ৫০ টাকা। আর শিশু পার্কে প্রবেশের জন্য ফি দিতে হয় ২০ টাকা।
মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথমবার সাফারি পার্কে বনভোজনে এসেছে ৭০ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে পেরে খুবই খুশি। দর্শনীয় এই স্থানটিতে অনেক শিক্ষার্থীই আসতে পারেনি। তারা সত্যিই অনেক কিছু মিস করল।’
এখানে ঘুরে কেমন লেগেছে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মামরুরা জান্নাত মৌ বার্তা২৪.কম-কে বলে, ‘বন্ধুদের সঙ্গে এসে পশু-পাখি দেখে খুব ভালো লেগেছে। আমরা সবাই উপভোগ করেছি। দূর থেকে আসায় সময় নিয়ে সব কর্নার দেখা যায়নি। পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে এসে সব ঘুরে দেখব।’
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে পরিবার নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছেন ফারুক হোসেন খান। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমবার সবাই মিলে এসেছি। কুমির, ময়ূর, পাখি ও প্রজাপতি দেখেছি। কিন্তু লম্বা ভিড়ের কারণে বাঘ ও সিংহ দেখতে না পেরে অপূর্ণতা রয়ে গেল।’
টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকা থেকে এসেছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি একটি পত্রিকার মার্কেটিং ডিরেক্টর। তাদের প্রতিষ্ঠানের ফ্যামিলি ডে পালন করতে এই পার্কে ভ্যানু ভাড়া করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দর্শনীয় জায়গা এটি। সহকর্মীরা খুব পছন্দ করবে স্থানটি।’
তিন সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে প্রথমবার সাফারি পার্কে এসেছেন গৃহিণী রুজিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু দেখা সম্ভব হয়নি। এসে ভালো লেগেছে। বাচ্চারা খুব উপভোগ করেছে।’ কথা টেনে নিয়ে তার স্বামী আদিল বসির ওসমানি বলেন, ‘কোর সাফারিতে গাড়িতে ওঠার লাইন একাধিক। সেখানে একটি লাইন করলে ভালো হয়।
নরসিংদীর ঘোড়াশাল থেকে একটি প্রাইভেট কোম্পানির ১০০ জন স্টাফ বার্ষিক আনন্দ ভ্রমণ করতে এসেছেন এই পার্কে। তাদের একজন মিলন আকন্দ বলেন, ‘এখানে এসে অনেক দর্শনীয় স্থানের চেয়েও মনে বেশি তৃপ্তি পেয়েছি। এই পার্কে অনেক কিছু দেখার সুযোগ আছে। পরিবেশটা সুন্দর ও নিরাপদ।’
ঘুরে দেখা গেছে, ‘দর্শনার্থীদের জন্য পার্কে টাইগার ও লায়ন নামে দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখানে স্বল্পমূল্যে সব রকমের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে খেতে বসে কাঁচের দেয়াল দিয়ে বাঘ ও সিংহ দেখা যায়।’
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, দর্শনার্থীদের বিনোদন দেওয়ার জন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা করছেন। পার্কটি থেকে জানুয়ারি মাসে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে সরকার। চলতি মাসে আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করেন তিনি।