লোহালিয়া ও লাউকাঠী নদী এখন মাছ শূন্য!
দেশে মাছের উৎপাদন বাড়ছে। তবে পটুয়াখালী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান দুই নদী থেকে দিন দিন মাছ কমে যাচ্ছে। জেলেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল ফেলেও তেমন মাছ পায় না। এ জন্য অব্যাহত নদী দূষণ এবং সাগর মোহনায় নাব্যতা সংকটকেই প্রধান কারণ মনে করছে মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টরা।
একটা সময় ছিল যখন নদী পাড়ের বাসিন্দারা একটি জাল নিয়ে নামলেই তার দৈনন্দিন চাহিদার মাছ পেয়ে যেত। কিন্তু তা এখন কেবলই স্মৃতি। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া লোহালিয়া ও লাউকাঠী নদী গত কয়েক দশকে যেমন তার যৌবন হারিয়েছে, তেমনি বিলীন হয়েছে মাছের অস্তিত্বও। এ দুটি নদী এখন মাছ শূন্য। তাইতো নদীতে এখন আর তেমন জেলেদেরও দেখা মেলে না। মাঝে মধ্যে কিছু জেলে নৌকা আর জাল নিয়ে এই নদীতে আসলেও তাদের অধিকাংশ সময় খালি হাতেই ফিরতে হয়।
এ কারণে অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাশাপাশি কিছু অসাধু জেলে আছেন যারা এই অকালেও নদীতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। যার ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে।
এদিকে গত কয়েক দশকে নগরায়ণের ফলে পটুয়াখালী শহরের যেসব ড্রেন নির্মিত হয়েছে তার সবগুলোই নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে এসব ড্রেনের মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা সরাসরি গিয়ে নদীতেই পড়ছে। যার ফলে দিনকে দিন নদী দূষিত হচ্ছে। তবে বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানায়।
পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আরজু বলেন, ‘আমরা শতভাগ সেনেটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করার পর কিছু অসাধু মানুষ তাদের টয়লেটের লাইনটি সরাসরি পৌরসভার ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এতে করে টয়লেটের ময়লা ড্রেন দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমরা কমিউনিটি ভিত্তিক সেপটিক ট্যাংক স্থাপনে বিষয়টি ভাবছি। যেভাবেই হোক নদী দূষণ করা থেকে বিরত থাকব।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের ডিন ড. লোকমান আলী বলেন, ‘নদীকে দূষণ মুক্ত রাখতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠী যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি নদী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই নদ নদীতে আবারো মাছ এবং বিভিন্ন জলজ প্রাণীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’