পলাশ-শিমুলের উচ্ছলতায় বসন্তের আগমন

  • আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বসন্তের জানান দিচ্ছে এসব ফুল, ছবি: সংগৃহীত

বসন্তের জানান দিচ্ছে এসব ফুল, ছবি: সংগৃহীত

ঠাণ্ডা এখন আর আগের মতো অনুভূত হচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়ের গরম পোশাকগুলো হয়ে উঠছে অস্বস্তির কারণ। তবে কি শীত বিদায় নিচ্ছে!

ঠিক ধরেছেন, শীতের বিদায়ে সদর্পে আগমন ঘটেছে ঋতুরাজ বসন্তের। এরইমধ্যে নতুন হাওয়ার ছোঁয়ায় প্রকৃতি নেচে ওঠছে। দুলে ওঠছে মানুষের মন। পাখ-পাখালির মনেও শিহরণ জাগছে। জাগছে প্রকৃতি। পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে নেমেছে আগুনঝরা উচ্ছলতার ঢল। বনের নিভৃত কোণে, মেঠোপথের ধারে কারও জন্য অপেক্ষা না করেই ফুটছে নাম না জানা অসংখ্য সব ফুল। তরুণ মনে বিহ্বলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে কোকিলের মায়াবী ডাক।

বিজ্ঞাপন

পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর এক দিন পিছিয়েছে বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কাজ করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে।

এসবই তো কেতাবি কথা। তরুণপ্রাণ কী আর এতো হিসাব করে চলে। কবি সুভাস মুখোপাধ্যায় তো বলেই গেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক/ আজ বসন্ত।’ সেকেলেরা হয়তো বলবে, বসন্তই যদি হবে, ফুল ফুটবে না কেন? ফুল ফোটার প্রতিশ্রুতি নিয়েই তো বসন্ত আসে। এখন অবশ্য বসন্তের আগেই ফুটে নানান ফুল। তাইতো রাধাচূড়া কিংবা নাগলিঙ্গম থেকে শুরু করে অসংখ্য বৃক্ষ ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। ফুলের মঞ্জুরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত কেবল প্রকৃতিকেই নয়, আবহমান কাল ধরে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণকেও রঙিন করে আসছে।

বিজ্ঞাপন

সুনামগঞ্জের শিমুল বাগান হয়তো চেনেন। এ বছর মাঘের মাঝামাঝিতেই ফুলে ফুলে লাল হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রটি। আপনার আশেপাশে আম গাছ থাকলে তাকিয়ে দেখুন না- কত সুন্দর মুকুল ধরেছে।

বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে এখন নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ্ম প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস আর কোকিলের মিষ্টি কলতানে উন্মাতাল হবে প্রকৃতি। ফুলেল বসন্ত যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস মুখরতায় মনপ্রাণ ভরিয়ে তোলে।

বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব।

এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন। নতুন সূর্যোদয়ে মধ্য দিয়ে এবারও বসন্ত আসুক- উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগে মিলে একাকার হয়ে।